উৎপাদনে সাড়া জাগানো সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলটি এখন চলছে নামে মাত্র। যেটি এক সময় সরকারিভাবে মজুরী কমিশনের মাধ্যমে চলতো সেটি এখন পরিচালনা করছে বিটিএমসি। ১৮শ শ্রমিকের মধ্যে দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের বিনিময়ে ১৬০ টাকা মজুরীতে মিলটিতে বর্তমানে মাত্র ৩০০ শ্রমিক রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে থেকে উপস্থিত থাকেন ১৫০-২০০ জন শ্রমিক। বাকি ১৫শ শ্রমিকের খবর কেউ রাখে না। জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে বিএনপি সরকারের সময় ভিত্তিপ্রস্তুর উদ্বোধনের পর এরশাদ সরকার এই মিলটির উদ্বোধন করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মিলটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপ নেয়। স্বল্প পরিসরে উদ্বোধন হওয়া মিলটির লভ্যাংশের টাকা দিয়েই প্রতিষ্ঠা করা হয় দুই নাম্বার ইউনিট। ১৮শ শ্রমিক আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের শ্রমের মাধ্যমে মিলটিকে জাকজমকপূর্ণ করে তোলে। তৈরি করা হতো কাপড়। এখান থেকেই উৎপাদিত কাপড় দেশের বিভিন্নস্থানের ফ্যাক্টারিগুলোতে সরবরাহ করা হতো। গড়ে উঠে শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন।১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মিলটির লভ্যাংশের টাকায় প্রতিষ্ঠিত দুই নাম্বার ইউনিটটি এক কোটি ১৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। চালু করা হয় কাপড়ের পরিবর্তে সুতা তৈরির কাজ। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আ.লীগ সরকারের সময়ে ভালোভাবেই চলছিল মিলটি। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্তও বন্ধ হয়নি মিলের কার্যক্রম। তবে ২০০৬ সালে ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে মিলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিলটি বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ১৮শ শ্রমিকের রুটি রুজির স্থান। মানবেতর জীবনযাপন করা এসব শ্রমিক ধীরে ধীরে ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ে।২০০৮ সালে আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে পুনরায় চালু করা হয় মিলটি। তবে সেই পূর্বের জাকজমকপূর্ণ অবস্থা আর ফেরেনি। সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলে ২৫ বছর নিয়োজিত থাকা শ্রমিক আব্দুল হাই জাগো নিউজকে বলেন, এক সময়ের লাভজনক ও উৎপাদনশীল মিলটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নামে মাত্র চলছে মিলটি। ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে আর কাজে যোগ দেয়নি। কেউ আমাদের খোঁজও নেয় না। ১৫শ শ্রমিক সবাই ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। মিলটির মায়া ছেড়ে যেতে পারিনা তবে শ্রমিক হিসেবে কাজ না করলেও মিলের সামনে মুদিখানার দোকান করে সংসার চালাচ্ছি। অপর এক নারী শ্রমিক শাহিদা বেগম বলেন, আমিও শ্রমিক হিসেবে সেখানে কাজ করতাম। এখন আর করি না। ১৬০ টাকা মজুরীতে কি সংসার চলে। এখন চায়ের দোকান করছি। তবে মিলটি পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেলে তারা আবার কাজে যোগ দেবেন বলে জানান। বর্তমান সরকারের প্রতি মিলটি আবার নতুন আঙ্গিকে চালু করার দাবি এসব শ্রমিকদের।সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলের সহকারী ব্যবস্থাপক (কারিগরি) খলিলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পূর্বে সরকারিভাবে মজুরী কমিশনের মাধ্যমে মিলটি চললেও এখন বিটিএমসির মাধ্যমে সার্ভিস চার্জ ভিত্তিক চলছে। উৎপাদান কমে গেছে। তাছাড়া মেশিনগুলো পুরাতন হয়েছে। সরকারের পুঁজি নেই। সার্ভিস চার্জ দিয়ে চলা মিলটিতে বর্তমানে শ্রমিকদের মজুরী ও বিদ্যুৎ বিলের আয়ও হচ্ছে না। এমএএস/এবিএস
Advertisement