ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে সরকারি কোয়ার্টার। অভিযোগ রয়েছে, এখান থেকে কয়েকজন অন্য জেলায় বদলি হলেও কোয়ার্টারের ঘর নিজ দখলে রেখেছেন। দীর্ঘদিন ধর এভাবে চলে এলেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
Advertisement
কোয়ার্টার বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সদর উপজেলা পরিষদে নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবন ছাড়া পাথরাজ, শুক, সেনুয়া ও টাংগন নামে ১৪টি দুতলা ভবন রয়েছে। এখান থেকে যারা অন্য জেলায় বদলি হয়েছেন তারা এখনো ঘর নিজ দখলে রেখেছেন। তাদের বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও ঘর ছাড়ছেন না।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের একটি সূত্র বলছে, অনেক আগে রেজুলেশনের মাধ্যমে গেজেটেড কোয়ার্টারের ভাড়া ৩ হাজার টাকা করা হয়। অনেকে ঠিকমতো এই ভাড়াও দেন না বলে অভিযোগ। ফলে পরিষদ প্রতি মাসে অনেক টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরকারি কোয়ার্টারের তালিকায় রয়েছেন সদর উপজেলার এলজিইডির কার্য-সহকারী আবু সাঈদ মো. করিম, উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাবুদ হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসের গার্ড মো. বাবুল আক্তার, উপজেলা কৃষি অফিসের উচ্চমান সহকারী মো. মুঞ্জুর আলম, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের অফিস সহায়ক মো. রবিউল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অফিস সহকারী মো. সফিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র রায়, উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের সিএ কাম-উচ্চমান সহকারী রেবা খাতুন, উপজেলা এলজিইডির সার্ভেয়ার মো. মফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক মো. মুন্না, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাত হোসেন, বিআরডিবির জুনিয়র অফিসার (হিসাব) মো. আবদুল হাই আল হাদী ও যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর জহির রায়হান।
Advertisement
এদিকে প্রতিমাসে বাসা ভাড়া তিন হাজার টাকা হলেও নিয়মিত কেউ ভাড়া পরিশোধ করেন না। তার মধ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অফিস সহকারী মো. সফিকুল ইসলামের বকেয়া ৭২ হাজার টাকা, মাবুদ হোসেনের ১৫ হাজার টাকা, আবু সাঈদের ১২ হাজার টাকা, বাবুল আক্তারের ৬ হাজার টাকা, মঞ্জুর আলমের ৬ হাজার টাকা, রবিউলের ১২ হাজার টাকা, বিপ্লব চন্দ্রের ৬ হাজার টাকা, রেবা খাতুনের ৯ হাজার টাকা, মফিজুর রহমানের ১৫ হাজার টাকা, মুন্নার ৬ হাজার টাকা, সাজ্জাতের ৬ হাজার টাকা, হাদীর ৯ হাজার টাকা ও জহির রায়হানের ৬ হাজার টাকা।
তবে উপজেলা এলজিইডির সার্ভেয়ার মো. মফিজুর রহমান পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ও এলজিইডির কার্য-সহকারী আবু সাঈদ মো. করিম নীলফামারীর খানসামায় বদলি হলেও এখন পর্যন্ত তারা দুজনই কোয়ার্টার ছাড়েননি। তারা বাসা দুটি দখলে রেখেছেন। এ নিয়ে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এলজিইডির এ দুজনকে এর আগে কয়েক দফা ঘর ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হলেও তারা কোনো জবাব না দিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সবশেষ গত বছরের ৬ নভেম্বরে ঘর ছাড়ার নোটিশ দেয় উপজেলা প্রকৌশলী কর্তৃপক্ষ।
তবে বারবার আবেদন করেও ঘর না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলা পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা জানান, অনেকেই বদলি হওয়ার পরও ঘর দখলে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ ভাড়া পরিশোধ না করেই বসবাস করছেন।
Advertisement
ঘর না ছাড়ার বিষয়ে জানতে মফিজুর রহমান ও আবু সাঈদ মো. করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা উপজেলা প্রকৌশলীকে দেখিয়ে দেন।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের বলেন, উপজেলা কোয়ার্টারে ১৪টি পরিবার আছে। এরমধ্যে দুজন বদলি হয়ে গেছেন। যারা বদলি হয়েছেন তাদের ঘর ছাড়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর যাদের বাসা ভাড়া বকেয়া রয়েছে তাদের দ্রুত সময়ে পরিশোধ করার জন্য বলা হয়েছে। এরপরও কেউ যদি ভাড়া বা ঘর না ছাড়েন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।
তানভীর হাসান তানু/জেডএইচ/এমএস