অর্থনীতি

সিএসআর নীতিমালা : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে সর্তক থাকতে নির্দেশ

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অর্থের সঠিক ব্যবহার ও স্বচ্ছতা আনতে নীতিমালা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রিণ ব্যাংকিং ও সিএসআর বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে করা হয়েছে। এতে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদে কোন ভাবে যেন সিএসআরের অর্থ না ব্যয় হয় সেদিকে সর্তক নজর রাখতে বলা হয়েছে।সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর সিএসআরের অর্থ ব্যয় নিয়ে বিতর্ক ওঠে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি দিক নির্দেশনা মূলক নীতিমালা জারির উদ্যোগ নেন। সিএসআরের অর্থ সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদে ব্যয় হচ্ছে বলেও বির্তক রয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সিএসআর ব্যয় ২০০৮ সালের পর কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিএসআর কার্যক্রমে যর্থাথতা, পরিচালক ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রভাবমুক্ততা এবং শেষ ব্যবহারের যথাযথ পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্বের সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও তাদের সিএসআর স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শমূলক মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত এই গাইডলাইিনটি তাদের সিএসআর বাজেট বন্টন এবং প্রান্তিক ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করার নিমিত্তে অবিলম্বে কার্যকর হবে। এই গাইডলাইনটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জনকল্যাণের জন্য গৃহীত বাহ্যিক সিএসআর উদ্যোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য সংশ্লিষ্ট শ্রম আইন দ্বারা সমর্থিত গৃহীত জনস্বার্থমূলক কার্যক্রম যেমন- কর্মপরিবেশের মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা/নিরাপত্তা বিষয়ক কার্যক্রম, লৈঙ্গিক সমতা, কর্মকর্তাদের প্রেষণা দান ইত্যাদির মধ্যে পড়বে না।এতে আরও বলা  হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ব্যাংকিং এন্ড সিএসআর ডিপার্টমেন্ট, ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন এবং ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ তাদের গতানুগতিক কার্যাবলীর আওতায় ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুশাসন ও অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত গুণগত মূল্যায়নের সময় এই গাইডলাইনের নির্দেশনার যথাযথ পরিপালন পর্যবেক্ষণ করবে।প্রশাসনিক অবকাঠামো:ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত বাৎসরিক সিএসআর কর্মসূচী প্রধান কার্যালয়ে গঠিত সিএসআর ইউনিট এর মাধ্যমে বা বৃহত্তর কর্মসূচীর ক্ষেত্রে একটি পৃথক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সিএসআর ইউনিট/ফাইন্ডেশনের কার্যক্রম ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অভ্যন্তরীর নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ব্যাংকিং এন্ড সিএসআর ডিপার্টমেন্ট ও অফসাইট সুপারভিশন ডিপার্টমেন্ট পর্যবেক্ষণ করবে। ব্যাংক/ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিএসআর ইউনিট তাদের সিএসআর কার্যক্রমের একটি বাৎসরিক প্রাক্কলিত বাজেট পরিচালক পর্ষদের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে, পর্ষদ প্রতিষ্ঠানের কর পরবর্তী নীট মুনাফা হতে তা অনুমোদন করবে। পর্ষদের অনুমোদনের জন্য দাখিলকৃত বাজেট প্রস্তাব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বা ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হতে পারবেনা।বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালাতে আরও বলা হয়, কর পরবর্তী নীট মুনাফা নেই এরূপ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান নতুন কোন সিএসআর কার্যক্রম গ্রহণ হতে বিরত থাকবে। তবে, পূর্বে প্রতিশ্রুতি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে।ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান জঙ্গীবাদ/সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে সহায়ক কোন কাজে সিএসআরের অর্থ বরাদ্দকরণে বিরত থাকতে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করবে। বিতরণকৃত সিএসআর ব্যয়ের দ্বারা কোনরূপ সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড অর্থায়ন করা হলে সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে হবে।সিএসআর কার্যক্রমের পরিধি:সুবিধাবঞ্চিত জনগনের ভাগ্যোন্নয়নে শিক্ষা ও কারিগরী প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনায় মোট সিএসআর ব্যায়ের ৩০ শতাংশ ব্যয়। পরবর্তী খাত হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত জনগনের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। মোট সিএসআর ব্যয়ের ২০ শতাংশ এ খাতে ব্যয় করা যুক্তিযুক্ত হবে। প্রত্যক্ষ সিএসআর বাজেটের অবশিষ্ট অর্থ অন্যান্য খাত যেমন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ বান্ধব পণ্য ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে গৃহীত কার্যাবলী, সুবিধাবঞ্চিত জনগনের বিনোদনে গৃহীত শিল্প, সাহিত্য সংক্রান্ত, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক কার্যক্রম, জীবন রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সরঞ্জামাদি ও অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগনের ভাগ্যোন্নয়নে আবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি খাতে ব্যয় করতে হবে।সিএসআর বাজেট বরাদ্দের এ গাইডলাইনটি শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ সিএসআর ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আর্থিক অন্তর্ভূক্তিকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সমর্থিত কৃষি, সেবা ও উৎপাদনখাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারী প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত উদ্যোগ এবং পরিবেশবান্ধব সবুজ প্রকল্প সংক্রান্ত পরোক্ষ ব্যয়সমূহ রেয়াতি হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার আওতায় এবং অবশিষ্টাংশ নতুন নতুন ভোক্তা সম্প্রসারণে বিনিয়োগ ব্যয়ের আওতায় পরবে।নীতিমালার আলোকে, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের ব্যয়কৃত সিএসআর সহায়তার উদ্দেশ্য পুরোপুরিভাবে অর্জন হয়েছে কী না তার প্রান্তিক ব্যবহার পরিবীক্ষণ নিশ্চিত করবে। প্রাতিষ্ঠানিক সিএসআর সহায়তার ক্ষেত্রে সিএসআর ইউনিট/ফাউন্ডেশন সহায়তা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে। এ সমঝোতা স্মারকে সহায়তা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রান্তিক ব্যবহারের অগ্রগতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিস্তি ছাড়করনের সুনির্দিষ্ট উল্লেখ থাকবে। ব্যক্তিক সিএসআর সহায়তার ক্ষেত্রে সিএসআর ইউনিট/ফাউন্ডেশন আর্থিক সহায়তা প্রাপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করবে এবং কোনরূপ অসন্তোজনক পরিস্থিতিতে সহায়তা প্রদান বন্ধ করবে।

Advertisement