অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে হাহাকার বাড়ছেই

শেয়ারবাজারের দরপতন কিছুতেই থামছে না। দিন যত যাচ্ছে শেয়ারবাজারে পতনের মাত্রা তত বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বেড়েই চলেছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার।

Advertisement

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন দেখা গেলেও এখন টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলেও শেয়ারবাজার পতনের মধ্যে নিমজ্জিত ছিল।

শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দাম কমার সীমা কমিয়ে দেয়। কিন্তু তাতেও পতন ঠেকানো যায়নি।

বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় পতন আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে টানা উল্লম্ফন দেখা যায়। এতে বড় লোকসান থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন দেখতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সে স্বপ্ন সত্যি হয়নি। শেয়ারবাজারে আগের মতোই টানা দরপতন হচ্ছে।

Advertisement

গত কয়েক কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও (১৯ আগস্ট) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক।

প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার প্রায় পাঁচগুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। আবার দাম কমার তালিকায় থাকা শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনে যতটা কমা সম্ভব ততটাই কমেছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার প্রায় চারগুণ রয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে এ বাজারটিতেও সবকয়টি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা সাত কার্যদিবস বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলো।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যান ভারতে। হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম চার কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

Advertisement

তবে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে ফের টানা দরপতন দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আট কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সাত কার্যদিবসেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।

আরও পড়ুন

দুর্বল ব্যাংককে তারল্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার পরিকল্পনা নেই: গভর্নর হাজার টাকার নোট বাতিলের বিষয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়।

কিন্তু প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হতেই বাজারের চিত্র বদলে যেতে থাকে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দরপতনের মাত্রা। এমনকি লেনদেনের শেষদিকে শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে দাম বাড়ার তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি মূল্যসূচকের মোটামুটি বড় পতন দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ৬৪ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০১ প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৯৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২২৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্যসূচকের বড় পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫১৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮০৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২৮৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি টাকার। ১৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, সিটি ব্যাংক, রেনেটা লিমিটেড, রবি, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং এসোসিয়েটেড অক্সিজেন।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৮৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৩টির এবং ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

এমএএস/কেএসআর/এমএস