দেশজুড়ে

হাসান মারা গিয়ে থাকলে অন্তত কবরটা দিতে চান বাবা-মা

অসহায় অসুস্থ বাবা-মায়ের একমাত্র সম্বল ছিলেন ছেলে মো. হাসান (২০)। অভাবের কারণে মাত্র ১১-১২ বছর বয়সেই ঢাকায় কাজের জন্য পাঠান বাবা-মা। ছোট বেলায়ই সংসারের হাল ধরেন হাসান। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর বিজয় মিছিলে গিয়ে আর ফেরেননি তিনি। নিখোঁজ ছেলের সন্ধানে ঢাকা ও ভোলার বিভিন্ন স্থানে ছবি নিয়ে ঘুরছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

Advertisement

নিখোঁজ হাসানের বাবা-মায়ের দাবি, তাদের ছেলে জীবিত থাকলে ফিরে পেতে চান অথবা গুলিতে নিহত হলে সন্তানকে নিজেদের হাতে কবর দিতে চান।

নিখোঁজ হাসান ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর ব্যাপারী বাড়ির দিনমজুর মো. মনির হোসেনের ছেলে।

হাসানের বাবা মো. মনির হোসেন ও মা গোলেনুর বেগম বলেন, অভাবের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করতে পারেনি হাসান। ছোটবেলা থেকে ঢাকার কাপ্তানবাজার এলাকায় এরশাদ মার্কেটের একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকানে চাকরি করে সে। তার আয়ে অসুস্থ বাবা-মার চিকিৎসা ও ছোট দুই ভাই-বোনের পাড়াশোনাসহ সংসার চলছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিজয় মিছিলে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে।

Advertisement

তারা জানান, গত ৫ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে ছেলের সঙ্গে তাদের সর্বশেষ কথা হয় ফোনে। ওই সময় তার বাবা-মা ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেন। কিন্তু স্থানীয়দের সঙ্গে বিজয় মিছিলে যান হাসান। ওই সময় যাত্রাবাড়ীতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। বিকেল থেকে ছেলের মোবাইল ফোনে কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

ঘটনার পরদিন ৬ আগস্ট বিকেলের দিকে হাসানের খালা তানিয়া বেগম ফেসবুকে একটি ভিডিওতে দেখতে পান একটি ভ্যানে করে গুলিবিদ্ধ দুজনকে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। ওই দুজনের মধ্যে একজন তাদের ছেলে হাসান বলে দাবি করেন তারা। এ ঘটনার পর ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গিয়ে ছেলের সন্ধান মেলেনি।

তাদের দাবি, ছেলে জীবিত থাকলে তাকে ফিরে পেতে চান তারা। আর গুলিতে নিহত হলে সন্তানকে নিজের হাতে কবর দিতে চান বাবা-মা।

নিখোঁজ হাসানের ছোট বোন সুমাইয়া আক্তার ও খালা তানিয়া বেগম জানান, ফেসবুকের ওই ভিডিও দেখার পর থেকে হাসানের ছবি নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে খোঁজ করা হয়। সন্ধান না পেয়ে গ্রামের বাড়ি ভোলায় ফিরে গত ২-৩ দিন ধরে ভোলা প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে হাসানের ছবি ও ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেন। কিন্তু কিছুতেই হাসানের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement

ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান পাটোয়ারী জানান, বিষয়টি শুনে তিনি নিখোঁজ হাসানের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। হাসানের সন্ধানে কাজ করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

এফএ/জিকেএস