মুদি দোকানদার আবু সায়েদকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ।
Advertisement
আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ভিকটিমকে হত্যার ঘটনা সংক্রান্তে আসামিরা জ্ঞাত আছে মর্মে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মামলার ভিকটিমকে হত্যায় হুকুমদানকারী, উসকানিদানকারী ব্যক্তি ও ব্যক্তিদের নামসহ মামলার ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটন এবং মামলার ঘটনার সহিত জড়িত অন্যান্য আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করার জন্য তাদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) মামলার সুষ্ঠুতদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালতে তাদের উপস্থিতিতে এ রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
রিমান্ড আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এবং মামলার মূলরহস্য উদঘাটন, এজাহারে বর্ণিত সহিংস ঘটনার বিষয়ে এবং মামলার ভিকটিমকে হত্যাকারী, হত্যার হুকুমদানকারী, উসকানিদানকারী ব্যক্তি ও ব্যক্তিদের নাম ও উক্ত ঘটনায় সরাসরি জড়িত আসামিদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ এবং গ্রেফতারের নিমিত্তে ডা. দীপু মনি (৫১) এবং আরিফ খান জয়কে (৫৩) ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আদেশদানে আদালতের সদয় মর্জি হয়।
Advertisement
সোমবার (১৯ আগস্ট) রাতে ডা. দীপু মনিকে রাজধানীর বারিধারা থেকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরিফ খান জয়কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের আজ আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
এর আগে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে গত ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে মোহাম্মদপুর থানার বছিলায় ৪০ ফিট চৌরাস্তায় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ নিহত হন।
Advertisement
গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এটিই প্রথম মামলা করা হয়।
মামলার বাদী আদাবর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী এস এম আমীর হামজা শাতিল। তিনি সচেতন নাগরিক হিসেবে একজন নিরীহ নাগরিক হত্যার বিচার চেয়ে এ মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল সমাবেশ করেন। ওই সব শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। বহু ছাত্র-জনতা নিহত ও আহত হন। গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে বসিলার ৪০ ফিট এলাকায় ছাত্র-জনতা শান্তপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করছিলেন। সেখানেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। রাস্তা পার হওয়ার সময় স্থানীয় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, নিহত সায়েদকে তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদায় নতুন বস্তি প্রধান হাটে নিয়ে দাফন করা হয়। তার মা, স্ত্রী, ছেলে সন্তান সেখানেই থাকেন। এ কারণে তারা ঢাকায় এসে মামলা করতে অপারগ। এজন্য বিবেকের তাড়নায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এ মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বাদী আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করতে বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান কামালের নির্দেশে পুলিশের আইজিপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধীনস্থ পুলিশদের নির্দেশ দিয়ে মিছিলে গুলি চালায়। পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কাজেই এর বিচার হওয়া প্রয়োজন।
জেএ/জেএইচ/জেআইএম