এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো আর না নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন একদল শিক্ষার্থী। তাদের কেউ অটোপাস, কেউ দ্বাদশ শ্রেণিতে দেওয়া নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষা অথবা এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশের দাবি জানাচ্ছেন।
Advertisement
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার সময়সূচি বাতিলের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, বোর্ড চেয়ারম্যানদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।
এছাড়া ঢাকা বোর্ডে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রুটিন বাতিলের কথা জানিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অটোপাস বা সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশের যে দাবি, সেটি আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডাকা বৈঠকে উপস্থাপন করার কথা জানিয়েছেন। তাছাড়া যে সিদ্ধান্ত হবে, তা শিক্ষার্থীদের অনুকূলে যাবে বলেই আশ্বস্ত করেছেন তিনি।আরও পড়ুন
এইচএসসি নিয়ে সিদ্ধান্ত ছাত্রদের অনুকূলে আসবে: পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আন্দোলনরত একদল শিক্ষার্থী খুশি হলেও দুশ্চিন্তায় বহু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তারা বলছেন, দেশের পরিস্থিতি যেহেতু স্বাভাবিক, কিছুটা দেরিতে হলেও সবগুলো বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা নিলে ভালো হবে। প্রয়োজনে নম্বর কমিয়েও পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। তবু অটোপাস বা সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল চান না তারা।
Advertisement
নটর ডেম কলেজের একজন পরীক্ষার্থীর অভিভাবক আজহারুল ইসলাম সৈকত বলেন, দেশে এখন এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। পরীক্ষা ছাড়া এভাবে শিক্ষার্থীদের পাস বা প্রমোশন করিয়ে দিলে, ভবিষ্যতে তারা ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় রেজাল্টের ওপরেও নম্বর বরাদ্দ থাকে। সেখানে অনেকেই বৈষম্যের শিকার হবে।
রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের দুজন শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে জানান, তাদের কলেজের অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে চান। আন্দোলনে দু-একজন আহত হলেও তারা এক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠবেন। আহতরাই বরং পরীক্ষা দিতে বেশি আগ্রহী বলে দাবি করেন তারা।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পূর্ণ নম্বরের পরীক্ষা দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের দাবি, সাড়ে ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে হাতেগোনা ২০ হাজার শিক্ষার্থীও এ আন্দোলনে নেই। অথচ তাদের কথামতো রুটিন বাতিল হচ্ছে। আর পরীক্ষা না নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। এটা তারা মেনে নেবেন না। তারাও সব পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে স্মারকলিপি দেবেন।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন পরীক্ষার্থীর মা কোনোভাবেই অটো পাসের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন না বলে জানিয়েছেন। সালেহা বেগম নামের সেই অভিভাবক জাগো নিউজকে বলেন, করোনার মধ্যে অটো পাস যাদের দেওয়া হয়েছিল, তারা প্রতি পদে পদে বিপদে পড়েছেন। আমার সন্তান এমন অটো পাস নিয়ে শিক্ষাজীবনের সামনে এগোবে, তা আমি চাই না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত অবশ্যই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা। আন্দোলনে আহতদের প্রয়োজনে হাসপাতালেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। তাদের প্রয়োজনে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হোক। তবুও সাড়ে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীকে এভাবে অটো পাস যেন না দেওয়া হয়।
Advertisement
মঙ্গলবারও শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও কর্মসূচিএদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবি আদায়ে অনড়। মঙ্গলবারও তারা ঢাকাসহ সারাদেশে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা ঢাকা বোর্ড ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। অনেকে আবার মিছিল নিয়ে সকাল থেকেই শহীদ মিনারে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া অনেক কলেজ থেকে স্থগিত পরীক্ষা না নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে অংশ নিচ্ছেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর আর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।
সূচি অনুযায়ী, এখনো ১৩ দিনের মোট ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা আটকে গেছে। যদিও প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৩টি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এরমধ্যে বাধ্যতামূলক বাংলা ও ইংরেজির চারটি বিষয় (প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র) এবং আইসিটি। ৮টি বিষয় ঐচ্ছিক (অপশনাল)।
এএএইচ/এমএএইচ/