কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাধা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার মদতদাতা হিসেবে অভিযুক্ত মিরপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এইচ এম মাহবুবুর রহমান পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের আলটিমেটামের মুখে গত ৮ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি উপাধ্যক্ষ পদে কর্মরত। তাকে ওই পদ থেকেও বিতাড়িত করার দাবি জানিয়ে ফের আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে মাহবুবুর রহমানকে সরাতে গড়িমসি করায় কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতিরও পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা।
Advertisement
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি বিরোধিতা করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় মিরপুর কলেজ এলাকায় আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন। তবে এখনো উপাধ্যক্ষ পদে বহাল তিনি।
এছাড়া মাহবুবুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করলেও তা গ্রহণ না করে ঝুলিয়ে রেখেছেন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক উপাচার্য এবং কট্টর আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত। শরীফ এনামুল কবির অধ্যক্ষকে স্বপদে বহাল রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তাকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। গত ৮ আগস্ট থেকে তারা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করেছেন। এছাড়া ১৫ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ডিএমপির মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
এতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই কলেজের শত শত শিক্ষার্থী কলেজের আশপাশে ও মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে অংশগ্রহণ করেছিলাম। গত ১৮ জুলাই দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির পর থেকে পুরো আন্দোলনজুড়ে মিরপুর কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য বশির আহমেদ ও ক্রীড়া শিক্ষক মিঠুন মন্ডলের পরামর্শে কলেজ ছাত্রলীগের সালমান ও তরিকুলের নেতৃত্বে অনেক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এইচ এম মাহবুবুর রহমান।
মিরপুর কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান জুয়েল বলেন, ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে মাহবুবুর রহমান গত ৮ আগস্ট পদত্যাগ করেন। তবে আমরা তাকে উপাধ্যক্ষের পদ থেকেও পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছি। পাশাপাশি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে সিনিয়র একজন শিক্ষককে নতুন করে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। তবে গভর্নিং বডির সভাপতি পদত্যাগপত্র গ্রহণ ও নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। এরপর থেকে মাহবুবুর রহমান আত্মগোপনে।
তিনি বলেন, আমরা বিষয়টির সুরাহা চাই। মাহবুবুর রহমানকে উপাধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সর্বজন গ্রহণযোগ্য সিনিয়র শিক্ষককে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে পদত্যাগ করা মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা নিয়ে আমি গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটুকুই শুধু নিশ্চিত করতে পারি।’
Advertisement
এএএইচ/এমকেআর/এমএস