আলোকচিত্র শব্দটার সঙ্গে জুড়ে থাকে অনেক স্বপ্ন অনেক কামনা। ক'জনের তা বাস্তবায়ন হয় সে গল্প হাতে গোনা। তবুও থেমে থাকেনা স্বপ্নদেখা। আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র দিবসকে কেন্দ্র করে লেন্স থেকে দৃশ্যপট ফ্রেমবন্দির স্বপ্ন নিয়ে ঘোরা তেমনি ক'জন ছবিয়ালদের মতামত পাঠকের জন্য তুলে ধরেছেন তাহমিদ হাসান।
Advertisement
ছবি বদলে দেয় চিন্তার পটভূমি
ফটোগ্রাফি মানেই অন্যরকম একটি ভালোবাসা। ফটোগ্রাফি একটি আর্ট, একটি প্রতিভা। এটা এমন এক প্রতিভা যার মাধ্যমে সাধারণ চোখ যেটা দেখতে পায় না, একজন ফটোগ্রাফার তার তোলা আলোকচিত্রের মাধ্যমে সেটা জনসাধারণের কাছে দৃশ্যমান করে তোলে। ছবি একটা প্রেক্ষাপটকে অঙ্কণ করে, চিন্তার দৃষ্টিকোনকে নির্দেশ করে। বদলে ফেলতে পারে চিন্তার পটভূমি। শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট কিছু অনুশীলনের মাধ্যমে এই প্রতিভাকে আরও বিকাশিত করে তোলা যায়। অনেকে মনে করেন ফটোগ্রাফির জন্য হয়তো ভালো ক্যামেরার প্রয়োজন; ধারনাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। একটি ছবি কেমন হবে সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে ফটোগ্রাফারের চিন্তা বা থিমের উপর। আর এই চিন্তা বা থিমকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ একটি মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়েও অতি আকর্ষণীয় ছবি তোলা সম্ভব। আমার কাছে ফটোগ্রাফি এমন একটি শখ যে, ব্যাক্তিগত জীবনে আমি যদি ডাক্তার না হতাম তাহলে হয়তো মূল পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফিকেই বেছে নিতাম। তবে যে কোনো প্রফেশনের পাশাপাশি ফটোগ্রাফিকেও রাখা যায় এবং এটা ফটোগ্রাফির একটি ইতিবাচক দিক।
সাবিহা আক্তার মুন্নী লিড মেন্টর,গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, ফটোগ্রাফি ক্লাব।
Advertisement
শখ থেকেই পেশার স্বপ্ন
আজ ১৯ আগষ্ট বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস। ফটোগ্রাফি মূলত একটা শখ। অনেকেই এটি শখের সঙ্গে নিজের প্রোফেশন হিসেবেও নিয়ে থাকে। তবে আমার কাছে এটি সম্পূর্নটাই একটা শখ। ফটোগ্রাফি বিষয়ে আইডিয়াটা সেই ছোট বেলা থেকেই, তবে বিস্তর জেনেছি পরে। ছবির পেছনে একটা গল্প থাকে, গল্প থাকে প্রতিটা বিষয়ের যা ছবির সঙ্গে সংযুক্ত। আবার ক্যামেরার ওপারের মানুষেরও একটা গল্প থাকে, এই গল্পটা বেশিরভাগ সময়েই অজানা। ছবিয়ালের সংগ্রামটা এতটাই অদ্ভুত যে আমাদের সমাজ হাস্যকর বলেই ধরে নেয়। সেসব উপেক্ষার পরেই দেখা মেলে সফলতার আলো। হুটহাট ছবি প্রকৃতি-জীবন ফ্রেমে বন্দি করতে করতেই একসময় মনে হলো শখ থেকে যদি পেশা হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। কেননা ফটোগ্রাফি নিশ্চয়ই সম্ভাবনার এবং উন্নত একটি শিল্প।
হাদিসুর রহমান তাওহীদবায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ,গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন
Advertisement
মানুষ মাত্রই সৌন্দর্য পিয়াসী
মানুষের অগ্রযাত্রায় আলোকচিত্র ও আলোকচিত্র শিল্পীদের নিরলস পরিশ্রম ও দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস পালিত হয়ে আসছে সেই ১৮৩৯ সাল থেকে। মূলত মানুষ মাত্রই সৌন্দর্য পিয়াসী, আর প্রেমিক মাত্রই চেষ্টা করেন স্মৃতি সংরক্ষণের, সেই প্রচেষ্টা থেকেই একেকজন হয়ে যান ফটোগ্রাফার। বর্তমান সময়ে ছবি তোলা পছন্দ করেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। ছবি তোলা অনেকের কাছে যেমন ভালোবাসা, আবার তেমনই অনেকেই আলোকচিত্র শিল্পকে তাদের পেশা হিসেবেও বেছে নিয়েছেন। ফটোগ্রাফি হলো মুখে না বলা গল্প, যা সুন্দরভাবে সময়, আবেগ, সংস্কৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি অনেক মুহূর্তের সত্যতাকে ক্যাপচার করে। বিভিন্ন ধরনের ফটোগ্রাফি রয়েছে– বন্যজীবনের ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ ফটোগ্রাফি, রাস্তার ফটোগ্রাফি, নবজাতকের ফটোগ্রাফি, ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি, প্রতিকৃতি ফটোগ্রাফি, বিবাহের ফোটোগ্রাফি, ইভেন্ট ফটোগ্রাফি, ফাইন আর্ট ফটোগ্রাফি, ফ্যাশন ফটোগ্রাফি, স্থপতি ফটোগ্রাফি। ফটোগ্রাফি একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তা ইতিমধ্যে অনেকেই বুঝতে শিখেছেন। তাইতো বিভিন্ন রকম প্রতিকূলতার মাঝেও শখের এই কাজটিকে এখন অনেকেই পেশা হিসেবে নিচ্ছেন। যারা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ফটোগ্রাফি করে নিজেদের পাশাপাশি দেশকে পরিচিত করছেন সেই ছবিওয়ালদের প্রতি শ্রদ্ধা।
খালিদ হাসানআইন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
ফটোগ্রাফি সম্ভাবনার জায়গা
২১শ শতাব্দীর অন্যতম চর্চিত একটি শিল্প মাধ্যম হচ্ছে ফটোগ্রাফি। মাল্টিমিডিয়ার এসময়ে একটি ছবি ক্ষেত্র বিশেষে একশো লাইনের চেয়ে বেশি কথা বলে। ফরাসি সরকার ১৮৩৯ সালের ১৯ আগস্টকে বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকে প্রতি বছর ১৯ আগস্ট বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। শিল্পবোধ সমৃদ্ধ সকল মানুষই ফটোগ্রাফিকে ভালোবাসে। প্রত্যেক ফটোগ্রাফারের যাত্রাটা আলাদাভাবে শুরু হলেও পছন্দ এবং ভালোবাসার জায়গাটা সবারই অভিন্ন। শুরুতে কেউ এখানে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা উপার্জনের চিন্তা নিয়ে আসে না। আসে ভালোবাসা এবং পছন্দের জায়গা থেকে। কিন্তু জীবনের চলতি পথে ধরা দেয় অর্থ, সম্মান উভয়। বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি চর্চার আদর্শ জায়গা। এখানে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মানুষের বৈচিত্র্যতা। কাজেই প্রতিবছর বাংলাদেশর ফটোগ্রাফাররা অর্জন করেন আন্তর্জাতিক মেগা পুরষ্কারসমূহ এবং বিদেশিরাও বাংলাদেশে আসে ছবির খুঁজে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফারদের নানান সংকট থাকলেও আছে অসম্ভব সাহস এবং উদ্দীপনা। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে আধুনিক মানের ফটোগ্রাফি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে আগামীর সংকট মোকাবেলা করতে এই সীমাবদ্ধতা খুব একটা দুরূহ হবে বলে আমার মনে হয় না।
মুহাম্মদ নঈম উদ্দীনসাবেক সাধারণ সম্পাদক, গণ বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি।
এমআইএইচ/এমএস