কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা নিয়ে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা ভারত। এমনকি, এই আন্দোলনের আগুন দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। ন্যায় বিচার ও অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে চলছে প্রতিবাদী মিছিল, বিক্ষোভ, আন্দোলন। এবার সেই আন্দোলনকে অন্য মাত্রা দিলো ডুরান্ড কাপ বাতিলের সিদ্ধান্ত।
Advertisement
রোববার (১৮ আগস্ট) সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ডুরান্ড কাপের ঐতিহাসিক ডার্বি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্ট বেঙ্গল ও মোহনবাগানের মধ্যে। কিন্তু কলকাতা পুলিশের পর্যাপ্ত পরিমাণের ফোর্স না থাকায় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ম্যাচটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এরপরই গর্জে ওঠেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাবের সমর্থকরা।
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গেটের সামনে জড়ো হন ক্লাব দুটির হাজারো সমর্থক। সেসময় তারা ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। তাতে সঙ্গ দেয় কলকাতার মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্যরাও। ফলে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ব্যস্ততম রাস্তায় শুরু হয় যানজট। চরম অসুবিধায় পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। আর তখন কলকাতা পুলিশ ইস্টার্ন মেট্রিপলিটনে রাস্তার যানজট সরাতেই তিন ক্লাবের সমর্থকদের উপর লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমর্থক দ্বীপজয় বর্মন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। জানি না কেন কলকাতা পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করলো। ধর্ষণ ও নির্মমভাবে হত্যার শিকার এক চিকিৎসকের জন্য আমরা ন্যায় বিচার ও অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করেছি মাত্র।
Advertisement
মোহনবাগান ক্লাবের সমর্থক দীপক দাস জানান, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু ওই চিকিৎসককে যেভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ আমরা একত্রে জানাচ্ছি। কিন্তু পুলিশ এসে কেন লাঠিচার্জ করলো, ঠিক বুঝতে পারলাম না।
তবে কেবল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনই নয়, কলকাতার যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ড, খড়দহ, শিলিগুড়ি, রানাঘাট আসানসোলসহ একাধিক জায়গায় মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরার হাতে হাত মিলিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সোদপুর বিটি রোডের ওপর দুটি ক্লাবের সমর্থকরা যৌথভাবে বিক্ষোভ করেন। সেসময় তারা সোদপুর ট্রাফিক মোড়ে মশাল জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান।
ডার্বি ম্যাচ বাতিল প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এই রাজ্য সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারছে না। পুলিশমন্ত্রী হিসেবে মমতার পদত্যাগ চাই। কেন্দ্রীয় সরকারকে হাতেপায়ে ধরতে পারেন যে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিন, যাতে খেলাটা হয়।
Advertisement
শুভেন্দু আরও বলেন, সময় এসেছে, এই সরকারকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলার। পতাকা দূরে সরিয়ে রেখে নবান্নে চলো। পদত্যাগ করবেন না উনি, পদত্যাগে বাধ্য করাতে হবে। নবান্ন অভিযানের ডাক দিন, নাগরিক হিসেবে পাশে আছি।
বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারির করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একটা ফুটবল ম্যাচ ঘিরে যেভাবে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করলো, তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ডিডি/এসএএইচ