আন্তর্জাতিক

এমপি আনার হত্যা মামলায় বারাসাত আদালতে চার্জ গঠন

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলায় প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। শনিবার উত্তর২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১২০০ পাতার ওই চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এই ঘটনায় প্রথম গ্রেফতারের ৮৭ দিনের মাথায় আদালতে এই চার্জশিট জমা পড়লো। গত ২৩ মে কসাই জিহাদ হাওলাদারকে প্রথম গ্রেফতার করে সিআইডি। পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

সিআইডি সূত্রের খবর, চার্জশিটে সিআইডির হাতে গ্রেফতার কসাই জিহাদ হাওলাদার এবং সিয়াম হোসেনের নাম আছে। তবে কী উদ্দেশ্যে তাকে খুন করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তদন্তকারীদের একাংশের ব্যাখ্যা, এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান শাহিনকে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে ঘটনার মোটিভ এখনও অজানা।

গত ১২মে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে আশ্চর্যজনকভাবে নিখোঁজ হন এমপি আনার। পরদিন ১৩ মে নিউটাউনের সঞ্জীবা আবাসনে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

Advertisement

ইতোমধ্যেই এই খুনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে দুজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এদের একজন কসাই জিহাদ হাওলাদার, তাকে গ্রেফতার করা হয় গত ২৩ মে। অন্যজন সিয়াম হোসেন, তাকে গ্রেফতার করা হয় গত ৭ জুন। আদালতের নির্দেশে জিহাদ রয়েছেন দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে। অন্যদিকে সিআইডি হেফাজতে রয়েছেন সিয়াম।

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা) সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়।

কসাই জিহাদ ও সিয়ামকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন সময় দক্ষিণ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গরের কৃষ্ণমাটি এলাকায় বাগজোলা খালে গিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকেই উদ্ধার হয়েছে একাধিক হাড়গোড়। প্রাথমিকভাবে সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হাড়গোড় মানুষের।

জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম জানিয়েছিলেন, তিনি পলাতক আখতারুজ্জামান শাহিনের অধীনে ৬০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। শাহিনের নির্দেশেই জিহাদকে কলকাতায় এনে রাজারহাটে ভাড়ার ফ্ল্যাটে রাখেন। খুনের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র, প্লাস্টিক, টলি ব্যাগ সবকিছুই কিনে এনেছিলেন নিউমার্কেট এলাকা থেকে। অন্য দুই অভিযুক্ত ফয়সাল সাজি এবং মুস্তাফিজ রহমান মাংস কিমা করার মেশিন কিনে আনেন। এমপি আনারকে হত্যার পর তার মাংস এবং হাড় আলাদা করা হয় তারপর ছোট ছোট টুকরো এবং কিমা করা হয় ওই মেশিনে। ওই মেশিন এখন কোথায় তা জানে ফয়সাল।

Advertisement

এরই মধ্যে গত ২৮ জুন সঞ্জীবা আবাসনের বিইউ-৫৬ ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হয় প্রায় চার কেজি মাংস। উদ্ধারকৃত ওই মাংস মানুষের কি না তা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছিল সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (সিএফএসএল)। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, এগুলো মানুষের মাংস।

কিন্তু ওই খণ্ডবিখণ্ড লাশ এমপি আনারের কি না তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষা করতে চান তদন্তাকারী কর্মকর্তারা। এজন্য এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন এবং রক্তের সম্পর্কের অন্যান্য আত্মীয়দের ডেকে তাদের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলেও জানায় সিআইডি।

আরও পড়ুন: আসামিরা জবানবন্দি প্রত্যাহার করলেও তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না: হারুন এমপি আনারের মরদেহ গুম করা সিয়াম কলকাতায় গ্রেফতার

ডরিনকে কলকাতায় আসার জন্য সিআইডির পক্ষ থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু গত প্রায় এক মাস ধরে বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এখনও পর্যন্ত কলকাতায় আসতে পারেননি ডরিন।

ডিডি/টিটিএন