আন্তর্জাতিক

মমতা ভণ্ডামি করছেন, অভিযোগ মৌমিতার বাবা-মায়ের

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে ভণ্ডামির অভিযোগ তুললেন আর জি কর হাসপাতালে খুন হওয়া চিকিৎসক তরুণীর বাবা-মা। তাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী একদিকে ন্যায়বিচার চেয়ে রাস্তায় নামছেন, অন্যদিকে আন্দোলন যাতে না হয় তার চেষ্টাও করছেন। তার এমন আচরণ কোনোভাবেই মেনে দিতে রাজি নয় ভুক্তভোগীর পরিবার।

Advertisement

নিহত শিক্ষার্থীর বাবা শেখর রঞ্জন দেবনাথ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এত কথা বলছেন, নিহতের বিচার চাই বলে রাস্তায় নামছেন, আন্দোলন করছেন। আবার অন্যদিকে আন্দোলন যাতে না হয়, সেই চেষ্টাও করছেন। তিনি কেন দ্বিচারিতা করছেন? তিনি কি সাধারণ মানুষদের ভয় পাচ্ছেন?

আরও পড়ুন>>

আর জি কর হাসপাতালের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি মমতার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে নামছে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতজুড়ে আউটডোর সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা

তার অভিযোগ, যারা মুক্তকণ্ঠে প্রতিবাদ করছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন। তিনি নিজে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, আবার প্রতিবাদ যাতে না হয় তারও ব্যবস্থা করছেন।

Advertisement

হাসপাতালে দায়িত্বরত অবস্থায় মৌমিতা দেবনাথকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনার এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। মৌমিতা হত্যার সুষ্ঠু বিচার এবং সবস্তরে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিবাদীরা।

এ অবস্থায় রাজ্যবাসীর কাছে মৌমিতার মায়ের বার্তা, যারা কন্যাশ্রী প্রকল্প, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা নিচ্ছেন, তারা সেগুলো নেওয়ার আগে নিজেরা সুরক্ষিত কি না একবার ভেবে দেখবেন।

তিনি বলেন, আগে দোষীদের চরম শাস্তি দাবি করছি। তারপর আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ভেবে দেখবো। তখন হয়তো ক্ষতিপূরণের টাকা নেবো। কিন্তু ন্যায়বিচারের আগে নয়।

আর জি কর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে শেখর রঞ্জন বলেন, এটি বিচারাধীন বিষয়। সিবিআই তাকে কী ধরনের প্রশ্ন করছে, তা নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না।

Advertisement

আরও পড়ুন>>

মেয়ের জীবনের বদলে টাকা নিতে পারবো না, নিলে সে দুঃখ পাবে গোল্ড মেডেলিস্ট হতে চেয়েছিলেন মৌমিতা চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা, সাবেক অধ্যক্ষ আটক

মেয়ের কাছ থেকে উদ্ধার ডায়েরি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে না চাইলেও মৌমিতার বাবা বলেছেন, সেদিন আমার মেয়ে লিখেছিল, সে সুখে থাকতে চায়।

ভুক্তভোগীর বাবা-মা সংশয় প্রকাশ করে বলেন, তাদের মেয়েকে অন্য কোথাও খুন করা হয়ে থাকতে পারে। যতক্ষণ না আমরা না জানতে পারছি, ততক্ষণ এই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছি না। তবে একটি বিষয় জানতে পেরেছি যে, মৌমিতার মরদেহ যেভাবে আমাদের দেখানো হয়েছিল, আগে সেভাবে ছিল না। শরীরে কোনো পোশাক ছিল না। এমন বেশ কিছু ঘটনায় আমাদের মনে হয়েছে, কর্তৃপক্ষ তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছিল।

‘প্রথমত, আমার মেয়ের ওই ক্ষতবিক্ষত দেহে কোনো পোশাক ছিল না। তাছাড়া একজন বলেছেন, আপনার মেয়ে সুইসাইড করেছে। এটি কখনোই হতে পারে না।’

ফলে প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী কি কাউকে আড়াল করতে চাইছেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে মৌমিতার বাবা জানান, সেটি আমরা জানি না। মুখ্যমন্ত্রী ভালো বলতে পারবেন।

তিনি বলেন, গোটা বিষয়টি সিবিআইয়ের ওপর ছেড়ে রেখেছি। তাদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, এই ঘটনায় সঞ্জয় একা জড়িত নন।

‘ভিপি আমার মেয়েকে প্রচণ্ড চাপে রাখতেন। জ্বর হলেও ছুটি দিতেন না। এমনকি, রাস্তায় একবার দুর্ঘটনার মুখে পড়লেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। হাসপাতালের প্রত্যেকটি ঘটনাই সে এড়িয়ে চলতো। কারণ এতে তার পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে। এমনকি মৌমিতা এটিও জানিয়েছিল, সে যে ওখানে পড়াশোনা করছে, তা যেন অন্য কাউকে জানানো না হয়। আমি কিছু করতে পারবো না। না হলে আমাকে ফেল করিয়ে দেবে। মনে সব সময় এই ভয়টা ছিল।’

ডিডি/কেএএ/