‘ছেলের মুখের দিকে চাওন যায় না। চোখটা নিয়া ওর খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কী করবো কিছুই বুঝতাছি না। আমি তো গরিব বাপ।’ কথাগুলো বলছিলেন— সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বাম চোখে গুলিবিদ্ধ হওয়া আমিনুল ইসলাম টুটুলের (২২) বাবা আলম হোসেন।
Advertisement
টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করতে না পারার যন্ত্রণার কথা জানিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, হাঁস পালন করে সংসার চালাই। ছেলের চোখে পুলিশের গুলির পর সেগুলোও বিক্রি করে দিয়েছি। ধারদেনাও করেছি ৫০ হাজারের বেশি। হাতে কোনো টাকা-পয়সা নেই। চিকিৎসক বলেছে ছেলেকে ভারতের চেন্নাই নিয়ে অপারেশন করতে হবে। আমি ছেলেকে এ অপারেশন কিভাবে করাবো?
চোখে গুলিবিদ্ধ আমিনুল ইসলাম টুটুল সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের কুসুম্বী গ্রামের আলম হোসেনের ছেলে। গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে তার বাম চোখ গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
ছেলের এমন করুন অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে মা হামেছা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, টানাপড়েনের সংসারে ছেলে বাম চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পারছে না। নিজের জমি ও নাই যে বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করবো। ঘটনার একদিন পর ঢাকার চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তারাও টুটুলকে ভারতের চেন্নাই হাসপাতালে নিতে বলছে। আমরা তো টাকার অভাবে সেখানে নিতে পারছি না।
Advertisement
জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই সিরাজগঞ্জ ইসলামিয়া কলেজ মাঠে টুটুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। একপর্যায়ে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে পড়ে। পরে পুলিশের গুলিতে আমিনুল ইসলাম টুটুলের শরীরে ৩২টি স্প্রিন্টার পাওয়া যায়। ছোটাছুটির একপর্যায়ে তার বাম চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। পরে সহপাঠীদের সহায়তায় শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর ১৮ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। পরে দেখানে নিলে তারা অল্প সময়ের মধ্যে ভারতের চেন্নাই হাসপাতালে নিয়ে রেটিনা অপারেশন করার পরামর্শ দেন।
গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম টুটুল জাগো নিউজকে বলেন, ওইদিন (১৬ জুলাই) সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে ইসলামিয়া কলেজ মাঠে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। বন্ধুদের সঙ্গে অংশ নেই। তখন পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট (গুলি) পিঠ ও চোখে লাগে। পরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে রুমমেট ও আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী আমায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। ১৮ জুলাই বন্ধুদের সহযোগিতায় ঢাকা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। বাম চোখে কিছু দেখতে পাই না। চিকিৎসকরা আমার বাম চোখ ভারতের চেন্নাই গিয়ে অপারেশন করতে বলেছেন। কিন্তু আমার পরিবারের পক্ষে এতো টাকা সংগ্রহ কোনোভাবে সম্ভব না।
ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, বর্তমান সরকার ও সমাজের বিত্তশালীদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন তাড়াশ উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী হাসান নীরব।
এম এ মালেক/আরএইচ/জেআইএম
Advertisement