দেশজুড়ে

র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ১০ বছরেও সন্ধান মেলেনি মফিজের

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থল বন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিনকে (৪০) ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্বজনরা। শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বন্দরের সামনে মানববন্ধন করেন তারা।

Advertisement

মফিজ উদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বালিয়াদীঘি এলাকার মৃত ওসমান আলির ছেলে। ২০১৪ সালে র‌্যাব পরিচয়ে তাকে তুলে নেওয়া হয়। এর ১০ বছর অতিবাহিত হলেও বাড়ি ফিরে আসেননি তিনি।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মফিজের ভাই বিএনপি নেতা। অন্যদিকে মফিজ উদ্দিন সোনা মসজিদ পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডে নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার সময় মফিজসহ পাঁচজনকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায় র‍্যাব।

পরদিন দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চারজনকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে ছিলেন না মফিজ উদ্দিন। তাহলে মফিজ উদ্দিন গেল কোথায়? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

Advertisement

মফিজের স্ত্রী লাইলি বেগম বলেন, ওইদিন সন্ধ্যার পরে বাড়িতেই ছিলেন আমার স্বামী। রাত ৮টায় শিয়ালমারা গ্রামের হোসেন আলির ছেলে খলিল ও বালিয়াদীঘি এলাকার সাকিম মাস্টারের ছেলে মো. রয়েল মোবাইলে কল দিয়ে আমার স্বামীকে বাইরে ডাকেন। পরে স্থলবন্দর এলাকার একটি ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন আমার স্বামী মফিজ উদ্দিন রয়েল, খলিল, মোগড়পাড়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে নাসির ও শুকুর আলি নামে এক ট্রাকচালক।

এ সময় র‍্যাবের পোশাক পরে ২০-২৫ জন এসে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তাদের উঠিয়ে নিয়ে যায়। সে মাইক্রোবাসের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল বগুড়া-১১-৪৭৩৯ ও দুটি র‍্যাবের পিকআপ যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫ ব্যাটালিয়ন-৪৫০২ ও ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-১০৬৪। উঠানোর সময় তাদের প্রচণ্ড মারধর করা হয়। এমনকি চোখে বেঁধে দেওয়া হয় কালো কাপড়।

পরদিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুর ১টার দিকে জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চারজনকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে ছিলেন না আমার স্বামী। কিন্তু বালিয়াদীঘি এলাকার সাকিম মাস্টারের ছেলে রয়েলের পরনে ছিল আমার স্বামীর পরিহিত লুঙ্গি। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে- র‍্যাব আমার প্যান্ট মফিজের পরনে এবং মজিদের লুঙ্গি আমার পরনে পরিয়ে দেয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমার স্বামীর কোনো খোঁজখবর পাইনি।

মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে আটক হওয়া খলিল বলেন, আমরা পানামার ১ নম্বর গেটের পাশে একটি ঘরে বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ রাতে র‍্যাব এসে আমাদের ভয় দেখিয়ে আটক করে নিয়ে যায়। এসময় তারা বলতে থাকেন কথা বলবি না। কথা বললেই গুলি করে দেব। রাতে র‍্যাব ক্যাম্পে আমাদের রাখা হয়। পরদিন আমাদের আদালতে তুলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে মফিজ উদ্দিন কোথায় জানি না।

Advertisement

মফিজ উদ্দিনের ভাই হাফিজ আলি বলেন, বেশকিছু দিন র‍্যাব অফিসে ঘুরেছি। কোনো লাভ হয়নি। পরে আমি শিবগঞ্জ থাকায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। তাতে কোনো কাজ হয়নি। এ জন্য আমি আদালতে গিয়ে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু আদালত চত্বর থেকে আমাকে র‌্যাবের গাড়িতে করে তুলে নিয়ে গুম করার হুমকি দেওয়া হয়। এজন্য আমি ভয়ে ভারতে পালিয়ে যাই।

মফিজ উদ্দিনের মা হাবিবা বেগম বলেন, ১০ বছর ধরে আমার ছেলের জন্য অপেক্ষা করে আছি। রয়েল আর খলিল আমার ছেলে ডেকে এমন কাজ করেছেন। আমরা এতোদিন সুষ্ঠু বিচার চাইতে পারিনি। এখন আমার ছেলেকে ফেরত চাই।

র‌্যাবের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিরোজকে একাধিকবার মোবাইলে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। নাম-ঠিকানা দিয়ে রাখেন র‌্যাবের কাছে পাঠিয়ে দেখি তাদের কাছে কোনো রেকর্ড রয়েছে কিনা।

সোহান মাহমুদ/আরএইচ/জেআইএম