মানবতাবিরোধী অপারাধের মামলায় প্রাক্তন কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের রায় মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুানাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করা হবে। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, আটক, ধর্ষণ, মুক্তিপণ আদায়, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে সুনির্দিষ্ট ১৬টি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।অভিযোগগুলো হলো-অভিযোগ-১১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের পুলিশ ফাঁড়ি ও ইসলামপুর গ্রামের কাজীবাড়িতে শাহজাহান চেয়ারম্যানকে হত্যা, নায়েব আলী নামের একজনকে জখম ও লুটপাট করে কায়সার ও তার লোকজন।অভিযোগ-২একই দিনে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর বাজারের পশ্চিমাংশ ও পার্শ্ববর্তী কাটিয়ারায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে সৈয়দ কায়সার ও তার লোকজন। এ সময় কামিনী রায়, বিনোদ বিহারী মোদক, শচীন্দ্র রায়, হীরেন্দ্র রায়, রতি বাবু, অহিদ হোসেন পাঠানের দোকানসহ প্রায় ১৫০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।অভিযোগ-৩১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার কৃষ্ণনগর গ্রামের অহিদ হোসেন পাঠান, চেরাগ আলী, জনাব আলী ও মধু সুইপারকে হত্যা করে কায়সার ও তার লোকজন। তাদের বাড়িঘরে লুটপাট করার পর আগুন দেয়া হয়।অভিযোগ-৪কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুর বাজারের উত্তর পূর্ব অংশে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা পূর্ব মাধবপুরের আব্দুস সাত্তার, লালু মিয়া ও বরকত আলীকে হত্যা করে এবং কদর আলীকে জখম করে।অভিযোগ-৫১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকালের মধ্যে হবিগঞ্জ সদরের শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্যগুদাম এবং শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের রেলব্রিজ এলাকায় আব্দুল আজিজ, আব্দুল খালেক, রেজাউল করিম, আব্দুর রহমান এবং বড়বহুলা এলাকার আব্দুল আলী ওরফে গ্যাদা উল্লাহ, লেঞ্জাপাড়া এলাকার মাজত আলী ও তারা মিয়া চৌধুরীকে আটক করে নির্যাতনের পর হত্যা করে কায়সার ও তার বাহিনী।অভিযোগ-৬১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যার পর হবিগঞ্জ সদরের পুরানবাজার পয়েন্টে সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি এম মহিউদ্দিনের বাড়িতে হামলা হয়। এছাড়া লস্করপুর রেললাইনের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং হীরেন্দ্র চন্দ্র রায়কে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করে কায়সার ও তার বাহিনী।অভিযোগ-৭কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল হবিগঞ্জ সদরের এনএনএ মোস্তফা আলীর বাড়িসহ ৪০/৫০টি বাড়িঘর, দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।অভিযোগ-৮মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ মে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার চাঁদপুর চা বাগানে সাঁওতাল নারী হীরামনিকে ধর্ষণ করে কায়সার বাহিনী।অভিযোগ-৯১৯৭১ সালের ১৫ মে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের লোহাইদ এলাকার আব্দুল আজিজ, আব্দুল গফুর, জমির উদ্দিন, আজিম উদ্দিন, এতিমুনেছা, নূর আলী চৌধুরী, আলম চাঁনবিবি ও আব্দুল আলীকে হত্যা করে কায়সার ও তার বাহিনী। এদিন আকরাম আলী চৌধুরী নামে একজনকে জখমও করে কায়সার।অভিযোগ-১০১৩ জুন হবিগঞ্জ সদর, মোকাম বাড়ি, শায়েস্তাগঞ্জ থানার আর এন্ড এইচ ডাকবাংলো এবং মাধবপুর থানার শাহাজীবাজার এলাকার হামলা চালায় কায়সার ও তার বাহিনী। এ সময় শাহ ফিরোজ আলী নামের একজনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। সাবু মিয়া নামের আরেকজনকে অপহরণের পর চালানো হয় নির্যাতন।অভিযোগ-১১১৯৭১ সালের ২৩ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হরিপুর থানার নাসিরনগরের গোলাম রউফ মাস্টার ও তার পরিবারের লোকজনদের উপর নির্যাতন চালায় কায়সার ও তার বাহিনী। এছাড়া গোলাম রউফ মাস্টারকে অপহরণ ও আটকের পর তার উপর নির্যাতন চলে। এক পর্যায়ে মুক্তিপণ আদায় করে তার বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার দয়াল গোবিন্দ রায় ওরফে বাদল কর্মকারের বাড়িতে হামলা চালায় কায়সার ও তার বাহিনী। লুটপাটের পর ওই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।অভিযোগ-১২কায়সার ও তার বাহিনী আগস্টের মাঝামাঝি কোনো একদিন হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার বেলাঘর ও জগদীশপুর হাইস্কুল থেকে আতাব মিয়া, আইয়ুব মিয়া, মাজেদা বেগমকে অপহরণ করে। মাজেদাকে ধর্ষণ করা হয়।অভিযোগ-১৩১৯৭১ সালের ১৮ অগাস্ট হবিগঞ্জের নলুয়া চা বাগান থেকে মহিবুল্লাহ, আবদুস শহীদ, আকবর আলী, জাহির হোসেনকে অপহরণ করে নরপতিতে আব্দুস শাহীদের বাড়ি ও রাজেন্দ্র দত্তের বাড়িতে স্থানীয় শান্তি কমিটির কার্যালয় এবং কালাপুরের পাকিস্থানি আর্মিক্যাম্পে নিয়ে যায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। অপহৃতদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।অভিযোগ-১৪১৯৭১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরে সোনাই নদীর ব্রিজ এলাকা থেকে সিরাজ আলী, ওয়াহেদ আলী, আক্কাস আলী, আব্দুল ছাত্তারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় কায়সার ও তার বাহিনী। তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।অভিযোগ-১৫অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি কোনো একদিন সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে শালবন রঘুনন্দ পাহাড় এলাকায় শাহাপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।অভিযোগ-১৬কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবড়িয়ার ভাটপাড়া থানার দাউরা, নিশ্চিন্তপুর, গুটমা, বুরুঙ্গা, চিতনা, নূরপুর, ফুলপুর, জেঠাগ্রাম, পাঠানিশা আন্দ্রাবহ, তিলপাড়া, কমলপুর, গঙ্গানগর, বাঘি, শ্যামপুর, কুয়ারপুর, নোয়াগাঁও, লক্ষীপুর, করগ্রাম গ্রামের ১০৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয়া হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়ে কায়সার রাজধানীতে তার ছেলের বাসায় ছিল। কায়সার হচ্ছে দ্বিতীয় কোনো আসামী যে শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেয়েছে। এর আগে বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেয়েছিল। সোমবার কায়সারের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। -বাসস
Advertisement