ধর্ম

আল্লাহ অহংকার পছন্দ করেন না

অহমিকা ও ঔদ্ধত্য শয়তানের স্বভাব। অহংকারের কারণে শয়তানকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। শয়তান চিরজাহান্নামি। যারা অহংকারী ও উদ্ধত তাদের ঠিকানাও জাহান্নাম। কারণ আল্লাহ অংকারীকে অপছন্দ করেন। অহংকারীকে তার দীন থেকে, হেদায়েত থেকে দূরে রাখেন। আল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার করে বেড়ায় আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনসমূহ হতে ফিরিয়ে রাখব, প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখার পরেও তারা তাতে ইমান আনবে না, তারা যদি সঠিক পথ দেখতে পায় তবুও সেই পথ সঠিক পথ বলে গ্রহণ করবে না। ভ্রান্তি ও গোমরাহির পথ দেখলে তাকেই তারা গ্রহণ করবে। (সুরা আরাফ: ১৪৬)

Advertisement

আল্লাহর এই বিশাল সৃষ্টিজগতে মানুষ খুবই দুর্বল প্রাণী। মানুষকে আল্লাহ উন্নত বুদ্ধিবৃত্তি ও ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিজগতের অনেক কিছু মানুষ নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে, কাজে লাগাতে পারে উন্নত বুদ্ধিবৃত্তির কারণে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্তু চারপাশে তাকালে আমরা দেখবো আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার কত নিদর্শন, শক্তি ও আকারে কত বিপুল, বিশাল সব সৃষ্টি আমাদের ঘিরে আছে। কত শক্তিমান নিপুণ স্রষ্টা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। এর মধ্যে মানুষ কত ক্ষুদ্র, কত দুর্বল, কত অকিঞ্চিৎকর। মানুষের কি অহংকার করা সাজে! আল্লাহর জমিনে দম্ভের সাথে পা ফেলা সাজে! আল্লাহ তাআলা বলেন, পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না। (সুরা ইসরা: ৩৭)

অহংকারের সূচনা হয় নিজেকে অনেক উন্নত ও শ্রেষ্ঠ মনে করা ও অন্যকে তুচ্ছ মনে করার মাধ্যমে। অহংকারীরা শুধু নিজের মত, নিজের কথা, নিজের সিদ্ধান্তকে সঠিক ও যথাযথ মনে করে। অন্যদের সঠিক কথাও গ্রহণ করে না। নিজেকে এত উন্নত মনে করে যে অন্যদের সাথে হাসিমুখে কথা পর্যন্ত বলে না। মুখ গোমড়া করে রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেন, অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করনা এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করনা। কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেননা। (সুরা লোকমান: ১৮)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যার অন্তরে এক বিন্দু অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। একজন ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রাসুল! সবাই তো এটা পছন্দ করে যে, তার পোশাক ভালো হোক, জুতো জোড়া ভালো হোক, এসব কি অহংকারের মধ্যে পড়ে? আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তাআলা নিজেও সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পছন্দও করেন। অহংকার হলো সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা। (সহিহ মুসলিম: ২৭৫)

Advertisement

অহংকারের চূড়ান্ত পর্যায়ে মানুষ নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ, এমন কি আল্লাহর ইচ্ছা ও ন্যায়বিচারের উর্ধ্বে মনে করে, আল্লাহর অবাধ্য হয়, মানুষের ওপর জুলুম করে। মনে করতে থাকে তার ওপর কারো ক্ষমতা নেই। তাকে থামানোর কেউ নেই। আল্লাহ তাকে ছাড় দেন আর সে বিভ্রান্তির মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে আর আরও অহংকারী হয়ে উঠতে থাকে। কিন্তু আল্লাহ যখন তার পতনের ফয়সালা করেন, তখন কেউ তাকে রক্ষা করতে পারেনা। বিশ্বজগতে ক্ষমতা ও সম্মানের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ তাআলা বলেন, আসমানসমূহ ও জমিন এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তার রাজত্ব আল্লাহরই এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সুরা মায়েদা: ১২০)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, বল, ‘হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’। (সুরা আলে ইমরান: ২৬)

ওএফএফ/এমএস

Advertisement