ফিচার

পাটের তৈরি ব্যাগে স্বপ্ন আঁকছেন তানজিলা

তানজিদ শুভ্র

Advertisement

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘যে কোনো মানুষেরই উদ্যোক্তা হতে পারার কথা। কিন্তু আমরা মানুষকে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ দেই না; বরং তাদের চাকরি খোঁজার পথে ঠেলে দেই।’ এই সময়ে ব্যতিক্রম অনেকেই চাকরির পিছু না ছুটে উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করছে। তেমনি একজন উম্মে তানজিলা।

স্নাতক পড়ুয়া তানজিলা নিত্যদিনের সঙ্গী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে শুরু করেন নিজের নতুন উদ্যোগ- ‘উপন্তিক’। শুরুটা হয়েছিল ব্লক বাটিকের কাজ দিয়ে পোশাকে নানান গল্প ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে। তবে বর্তমানে পাটের তৈরি ব্যাগসহ জুট কটনের হ্যান্ড ব্যাগ, লাঞ্চ ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, স্কুল ব্যাগ, কয়েন ব্যাগ সহ হরেক রকমের ব্যাগ প্রস্তুতে কাজ করছে উপন্তিক। নিজস্ব কারখানায় প্রস্তুতকৃত এসব ব্যাগকে দৃষ্টিনন্দন করতে করেন হ্যান্ড পেইন্টিংসহ সুঁই সুতার নানান কারুকাজ।

মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা উম্মে তানজিলা স্বপ্ন দেখতেন চিকিৎসক হওয়ার। ভর্তি যুদ্ধে জয়ী না হয়ে অনেকটাই ভেঙে পড়েন। এরপর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও সুযোগ হয়নি। লালিত স্বপ্ন পূরণ না করতে পেরে দমে যাননি তিনি। শখের বসে আঁকাআঁকি করতেন। বড় বোনের উৎসাহে পোশাক নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। চাকরি পছন্দ না করা তানজিলা হাঁটতে থাকেন উদ্যোক্তা হওয়ার পথে। এভাবেই স্বপ্নের মোড় ঘুরতে থাকে ভিন্ন দিকে।

Advertisement

আরও পড়ুনরূপকথার যেসব দুর্গ, শহর আছে বাস্তবেই

উপন্তিক নাম বাছাই সম্পর্কে তানজিলা জানায়, বরাবরই মৌলিক নাম খুঁজছিলেন তিনি। চমৎকার এই নামটি পছন্দ হওয়ায় এ নামেই কাজ শুরু করেন। শুরু থেকেই পরিবারের সদস্যদের থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন তানজিলা। মায়ের বলা ‘তুই পারবি, সুন্দর হচ্ছে’ কথাগুলো সব সময়ই অনুপ্রাণিত করে তাকে। স্বল্প পুঁজিতে শুরু করলেও এখন তানজিলার অধীনে আরও তিন জন কাজ করছেন। উপন্তিক থেকে তানজিলার মাসিক আয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। গ্রাহকের প্রত্যাশার চেয়েও ভালো মানের পণ্য সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উপন্তিক।

তানজিলা বলেন, গ্রাহক নতুনত্বকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আমিও তাদের চাহিদা মতো কাজে নতুনত্ব এনেছি। নতুন কোনো কিছু পেলে গ্রাহকের চাহিদাও থাকে বেশি। তিনি আরও জানান, ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন হ্যান্ড ব্যাগের চাহিদা বেশি তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে পাটের তৈরি ব্যাগের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

ইব্রাহীম খাঁ সরকারি কলেজ সহ বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে ব্যাগ সরবরাহ করে আসছে উপন্তিক। সারাদেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে উপন্তিক তাদের পণ্য সরবরাহ করে থাকে। পোশাকে ব্লক বাটিকের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপন্তিকের স্বত্বাধিকারী উম্মে তানজিলা বলেন, আপাতত পুরো টিম ব্যাগ নিয়েই কাজ করছি। পোশাকের কাজ এখন করা হয় না। তবে পরবর্তীতে বড় পরিসরে পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করবো।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটের বিষয়টি স্মরণ করে ব্যবসার ঝুঁকি নিয়ে তানজিলা বলেন, অনলাইন বা অফলাইন ঝুঁকি সব ক্ষেত্রেই আছে, সেটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হয়। আমার কাজ যেহেতু পুরোটা অনলাইন নির্ভর তাই অনলাইন না থাকলে ব্যবসা বন্ধ। প্রতিদিন আমার যে পরিমাণ অর্ডার আসে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সেই অর্ডারগুলো তখন আসেনি। অফিসের খরচ পুরোটাই এবার নিজের থেকে দিতে হয়েছে।

Advertisement

উপন্তিককে দেশ সেরা ব্র্যান্ড করার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন উম্মে তানজিলা। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার নাম না, উপন্তিক নাম সবাই জানুক। আমার ছোট্ট ফেসবুক পেইজ একদিন অনেক বড় ব্র্যান্ড হবে, ইনশাআল্লাহ’।

উম্মে তানজিলা পড়াশোনা করছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে। গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে রয়েছে উপন্তিকের কারখানা যেখান থেকেই স্বপ্ন ছুঁয়ে আগামীর পথে এগিয়ে যাচ্ছে উদ্যমী তানজিলা।

লেখক: শিক্ষার্থী ও ফিচার লেখক, গাজীপুর।

আরও পড়ুনইন্টারনেট ব্যবহারে কোনো টাকা লাগে না যে দেশেকেন তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তি বলা হয়?

কেএসকে/এএসএম