গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকালে গাজীপুরের আনসার একাডেমির সামনে আনসার বাহিনীর গুলিতে আহত হন কলেজছাত্র রায়হান মিয়া (২২)। এক হাত থেতলানো ছাড়াও পুরো শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন তিনি। তার চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। এ পর্যন্ত যা ব্যয় হয়েছে তার পুরোটাই করেছে ধার করে।
Advertisement
রায়হান ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ তলায় বার্ন ইউনিটের ৪১৯ নম্বর (পুরুষ) ওয়ার্ডে ৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রায়হান ৬ আগস্ট সেখানে ভর্তি হন।
৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকালে গাজীপুর আনসার একাডেমির সামনে আনসারদের এলোপাথাড়ি ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রায়হান। তারপরও ক্ষান্ত হয়নি তারা, তাকে লাঠি ও পায়ের বুট দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে রায়হান মারা গেছেন ভেবে তাকে পাশের সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে বাইরের নালার মধ্যে ফেলে দেয়। পরে এলাকাবাসী তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঢাকায় পাঠায়।
তার সহপাঠী নাঈমা সুলতানা জানান, রায়হান অত্যন্ত ভদ্র ও দরিদ্র ঘরের সন্তান। তার বাবা কৃষিকাজ করেন। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার হরিরামপুর, ছাপিপাড়া এলাকায়। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার জন্য রায়হান গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ইকো টেক্স নামের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।
Advertisement
রায়হানের মা রাশিদা বেগম জানান, রায়হানের বাবা রমজান আলী একজন দরিদ্র কৃষক। রায়হান চাকরির বেতন থেকে তার লেখাপড়ার খরচ চালানো ছাড়াও মাস শেষে বাড়িতে টাকা পাঠায়। বাবা-মার ৪ সন্তানের মধ্যে রায়হান একমাত্র ছেলে। এ পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসার জন্য ১ লাখ টাকার ওপর খরচ হয়েছে। তার এ চিকিৎসার পুরো টাকাটাই অন্যের কাছ থেকে ধার নেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ দিলেও অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, স্নাতক (অনার্স) শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রায়হান খুবই মেধাবী। তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকায় বাসবাস করেন এবং লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি পোশাক কারখানায় খণ্ডকালীন চাকরি করেন।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/এএসএম
Advertisement