অর্থনীতি

হাটে ঘাটে রাস্তায় চাঁদাবাজি কমলেও কমেনি মাংসের দাম

* কমানোর উদ্যোগ দরকার

Advertisement

হাটে ঘাটে রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে গরুর মাংসের দাম কমানো সম্ভব। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা অভিযানে গেলে বছরের পর বছর এমন মন্তব্য করে গেছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও এর প্রভাব পড়েনি মাংসের বাজারে। আগের ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মাংস। যদিও এসময় সবজিসহ অনেক পণ্যের দাম কমেছে।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন মাংসের দোকানে ঘুরে মাংসের দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।

ঢাকা শহরের বাজারগুলোতে মাংস বিক্রির জন্য অধিকাংশ গরু গাবতলী পশুহাট থেকে কেনা হয়। এ হাটে চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ থাকলেও এখন চিত্র পাল্টেছে। চাঁদাবাজি বন্ধে এ হাট তদারকি করছেন শিক্ষার্থীরা। রাস্তাঘাটের চাঁদাবাজিও কমেছে। তারপরও কমছে না মাংসের দাম। এ বিষয়ে এখন বিভিন্ন যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় গরু আসছে না। দেশি গরুর সংকট রয়েছে। একমাসের বেশি সময় ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এছাড়া কোরবানির পরে মাংস বিক্রিও কমেছে। সবমিলিয়ে খরচ বাঁচানোতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে দেশের সব বর্ডার বন্ধ। গরু আসছে না। এ অবস্থা গরু নেই, মাংসও নেই।

চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও মাংসের দাম কমছে না কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আসলে বর্ডারে চাঁদাবাজির কথা বলতাম। বর্ডারে এক গরুতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা দিতে হতো। এখনতো গরুই আসছে না। দেশি জাতের গরুরও সংকট রয়েছে। তাই চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও দামে প্রভাব পড়ছে না।

রবিউল ইসলাম বলেন, এখন প্রশাসন বা মন্ত্রণালয় থেকে আলোচনা করে যা বলবে সেই অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের সাজেশন দেবো। আমার মতে, এখন প্রতিটি চড়ে গরু পালন করতে হবে। সেজন্য সরকারকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এরপরও দাম কমতে বছরখানেক সময় লাগবে। এ বিষয়ে বর্তমান সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবে কিনা জানি না। তবে আলোচনা দরকার।

Advertisement

তথ্য বলছে, এক দশক আগে একজন মানুষ বাজার থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কিনতে পারতেন। এখন এক কেজি গরুর মাংসের জন্য খরচ করতে হয় অন্তত ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশ।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল গড়ে ৩০০ টাকা। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয় ৪০০ টাকা। ২০২১ সালে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় প্রায় ৬০০ টাকায়।

অথচ সরকারি হিসাবে দেশে গত এক দশকে গরুর উৎপাদন বেড়েছে। গরু-ছাগল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে গরুর সংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ। এরপর প্রতিবছরই গরুর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গরুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি ৪৯ লাখে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদা-যোগান ঠিক থাকলেও গরুর মাংসের দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। কারণ মাংস ব্যবসায়ীরাও অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে তাদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। যে কারণে কেউ চাইলেও কমদামে মাংস বিক্রি করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের তদারকিতেও ঘাটতি আছে।

এদিকে গত রমজানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৯৫ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন উত্তর শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান। এরপর তিনি বেশ আলোচিত হয়েছিলেন। পরে অন্য ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে দাম বাড়াতে বাধ্য হন।

খলিলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন চাঁদা দিতে হয় না। এখন আমরা ৬০০ টাকায় মাংস বিক্রির পক্ষে। তবে আমাদের নিয়ে প্রশাসনকে বসতে হবে। তখন কিছু লাইনঘাট দেখিয়ে দেবো। সে হিসেবে করলে দাম কমে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘কমদামে মাংস বিক্রি সম্ভব। তখন মাংস বেশি বিক্রি হবে। খরচও পোষাবে।’

তিনি বলেন, ‘আসলে বেশিভাগ মাংস বিক্রেতা গাবতলী হাট থেকে গরু কেনেন। সেখানে দাম ঠিক করেন ব্যাপারীরা। চাঁদাবাজি কমলে খরচও কমেছে। কিন্তু তারা কম দামে গরু বিক্রি করছে না। তাদের ধরতে হবে।’

মালিবাগ এলাকায় খোরশেদ গোস্ত বিতানও কম দামে মাংস বিক্রি করেছে গত রমজানে। ওই দোকানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, আমরা কম দামে মাংস বিক্রি করতে প্রস্তুত। সবাইকে একসঙ্গে কমাতে হবে। সবাই যখন বেশি দামে বিক্রি করবে, কেউ একজন কেন কমাবে বলেন। আসলে একটি উদ্যোগ দরকার।

এনএইচ/এমএএইচ/এএসএম