প্যারিস অলিম্পিকের ফাইনালের আগে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিলেন ভারতীয় নারী কুস্তিগির ভিনেশ ফোগাট। শরীরের ওজন ১০০ গ্রাম বেশি হওয়ার কারণে তাকে ফাইনালে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। তবে স্বপ্নের ফাইনাল খেলার জন্য চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি তিনি।
Advertisement
ফাইনালের আগের রাতে সাড়ে ৫ ঘণ্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন ভিনেশ। এমনকি তিনি এতটাই ঝুঁকি নিয়েছিলেন যে, এতে তার মৃত্যুও হতে পারতো। এমনটি জানিয়েছেন ভিনেশের কোচ উলার অ্যাকোস।
অ্যাকোস বলেন, ‘সেমিফাইনালের পর ভিনেশের ওজন ২.৭ কেজি বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট বিভিন্ন শারীরিক কসরতের পরও দেখা যায় তার ওজন ১.৫ কেজি বেশি। তারপর ৫০ মিনিট সওনা নেন ভিনেশ। ওর শরীরে যাতে কোনো অতিরিক্ত পানি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম আমরা। মধ্যরাত থেকে সকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সব রকম চেষ্টা করেছিলাম। ওজন কমানোর জন্য যা যা করা সম্ভব, সব করা হয়েছিল। ২০ মিনিট পরিশ্রম করার পর ২-৩ মিনিটের বিশ্রাম নিয়েছিল। আবার পরিশ্রম শুরু করেছিল। অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে একটা সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে ভিনেশ। ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তবে অল্প সময়ের মধ্যে সামলে নিয়ে আবার ওজন কমানোর চেষ্টা শুরু করেছিল। তার বেশি সম্ভব ছিল না। আমার মনে হয়েছিল, আরও কিছু করতে গেলে ভিনেশ মারাও যেতে পারে।’
অলিম্পিকের ফাইনাল থেকে বাদ পড়ায় কান্না ভেঙে পড়েছিলেন ভিনেশ। এমনটি অসুস্থও হয়ে পড়েন তিনি। পরে ভিনেশকে হাসপাতালেও ভর্তি করাতে হয়।
Advertisement
এ বিষয়ে অ্যাকোস বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ফেরার পর সে দিন রাতে ভিনেশের সঙ্গে কথা হয়েছিল। ভিনেশ বলেছিল, ‘‘কোচ দুঃখ পাবেন না। আপনিই তো আমাকে বলেছিলেন, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলে বা বাড়তি শক্তির প্রয়োজন হলে একটা কথা ভাবতে। আমি বিশ্বের সেরা মহিলা কুস্তিগিরকে (জাপানের ইউ সুসাকি) হারিয়েছি। আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি। আমরা প্রমাণ করেছি সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে পারলে ফল পাওয়া যায়। পদক বা মঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারোও পারফরম্যান্স ছিনিয়ে নেওয়া যায় না।’’ মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত লাগছিল। অথচ ভিনেশ আমাকে এই কথাগুলো বলে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল রাতে!’
ফাইনালে খেলতে না পারলেও নিজের শিষ্যকে নিয়ে গর্ববোধ করেন অ্যাকোস। ভিনেশের আত্মবিশ্বসা দেখে অবাক হয়েছিলেন তিনি। সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেভাবে লড়াই করেছেন ভিনেশ, তার জন্য আনন্দিত অ্যাকোস।
অলিম্পিকের কুস্তিগিরে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ফাইনালে গিয়েছিলেন ভিনেশ। তার এই অসামান্য কীর্তিকে ভারতের গর্ব বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এমএইচ/এমএস
Advertisement