সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের শুনানি ঘিরে সরগরম ছিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কড়া। এর মধ্যেই বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন আসামিদের লক্ষ্য করে। কাঠগড়ায় দুজনই ছিলেন অনেকটা নির্বিকার।
Advertisement
বুধবার (১৪ আগস্ট) সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালতে হাজির করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে (২৪) হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তাদের দশ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক তাদের দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
হাতে ছিল হ্যান্ডকাপ, পরনে ব্লুলেটপ্রুফ জ্যাকেটসালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে আদালতে লোহার বেষ্টনীর কাঠগড়ায় নেওয়ার সময় মাথায় ছিল হেলমেট, পাঞ্জাবির ওপরে ব্লুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতে ছিল হ্যান্ডকাপ।
ডিম ও জুতা নিক্ষেপএজলাসে ঢোকার সময় এক আইনজীবী এফ রহমান ও আনিসুল হকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি মারধরের শিকার হন। রিমান্ড শুনানির আগে দুজনকে আদালতে তোলা হয়। এসময় তাদের লক্ষ্য করে এজলাসের ভিতর থেকে একটি ডিম নিক্ষেপ করা হয়। এরপর রিমান্ড শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার পথে আদালত ভবনের সামনে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন আইনজীবীরা।
Advertisement
রিমান্ড শুনানি শেষে ভিকটিম শাহজাহান আলীর বাবা ইমাম হোসেন এজলাসের মধ্যেই বলেন, ‘আমার কিছু কথা আছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই। আমার ছেলের লাশ দেখতে দেয়নি তারা। আমি আমার ছেলের দাফন দিতে পারিনি। তারা খুনি। তাদের ফাঁসি চাই।’
আরও পড়ুন সালমান এফ রহমান-আনিসুল হককে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক ১০ দিনের রিমান্ডে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক গ্রেফতারএসময় কাঠগড়া থেকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিলেন সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক। দীর্ঘ বিশ মিনিট তারা কাঠগড়ায় ছিলেন। তাদের লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তার ফাঁসি চেয়েও স্লোগান দেন তারা।
সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের হুকুম এবং ইন্ধনে ভিকটিম শাহজাহানকে গুলি করে হত্যা
রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সজিব মিয়া উল্লেখ করেন, মামলার বাদীর ছেলে শাহজাহান আলী (২৪) নিউমার্কেট থানাধীন বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপোশের দোকানে কাজ করতেন। গত ১৬ জুলাই সকালে দোকানে কাজ করার জন্য আসেন এবং দোকানে কাজ করতে থাকেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন তখন তুঙ্গে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তার রেলিং ভাঙচুর করতে করতে নিউমার্কেটের দিকে এগিয়ে আসে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেয়। এসময় ওপরে উল্লেখিত আসামিদের হুকুম ও ইন্ধনে শাহজাহান আলীর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এক পর্যায়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি শাহজাহানকে গুলি করেন।
Advertisement
এতে শাহজাহান রাস্তায় পড়ে থাকলে পথচারীরা চিকিৎসার জন্য প্রথমে ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাদীর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহজাহানকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকাররিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে এ মামলার ঘটনার সঙ্গে আসামিদের জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তীসময়ে ১৩ জুলাই সদরঘাট এলাকা থেকে বিজিবি এবং কোস্টগার্ডের সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
আসামিদের কাছে ছিল বৈদেশিক মুদ্রারিমান্ড আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, গ্রেফতারের সময় আনিসুল হকের কাছ থেকে তল্লাশি চালিয়ে ১৭ হাজার ৫১২ ইউএস ডলার, ৭২৬ সিঙ্গাপুর ডলারসহ তিনটি লাল রঙের কূটনৈতিক পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।
সালমান এফ রহমানকে তল্লাশি করে ১২ হাজার ৬২৮ ইউএস ডলার, ৬ হাজার ৫০০ দিরহাম, উজবেকিস্তানের ১৩ লাখ মুদ্রা, সৌদির ১৯ হাজার ৬৫০ রিয়াল, ৭৭৯ সিঙ্গাপুরের ডলার, ১৫০ পাউন্ড, ১ হাজার ৩২১ ইউরো, ভুটানের মুদ্রা ৬ হাজার ২৩০, ইন্ডিয়ান রুপি ২ হাজার, ৩ হাজার ২২০ বাথ, বাংলাদেশি ৫০ হাজার টাকা, একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট ও একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (১৪ আগস্ট) নিউমার্কেট থানা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান।
গত ১৬ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম (৪৫) একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয়দের।
এ মামলার অভিযোগে আয়শা বেগম বলেন, আমার ছেলে শাহজাহান আলী নিউমার্কেট থানার মিরপুর রোডের বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপোশের দোকানে কাজ করতো। প্রতিদিনের মতো ১৬ জুলাই সকাল ৯টার দিকে দোকানে কাজ করার জন্য আসে।
এদিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাতপরিচয় একজন ব্যক্তি ছেলের মোবাইল নম্বর থেকে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে জানায়, শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি। আমি সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক পপুলার হাসপাতালে আসি এবং জানতে পারি, আমার ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
‘আমি তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে মর্গে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করি। তখন বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারি, আমার ছেলে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে নিউমার্কেট থানাধীন মিরপুর রোডের টিটি কলেজের বিপরীত পাশে কাদের আর্কেড মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর পড়ে ছিল। উপস্থিত পথচারীরা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
জেএ/এএসএ/জিকেএস