দেশজুড়ে

হাসপাতালে কাতরাচ্ছে গুলিবিদ্ধ কামরুল, দরিদ্র মায়ের আহাজারি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালের কাতরাচ্ছে সপ্তম শ্রেণি ছাত্র কামরুল হাসান (১৬)। ৫ আগস্ট কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা সদরে গুলিবিদ্ধ হয় সে। বুলেটের আঘাতে তার ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে।

Advertisement

একমাত্র ছেলের এ অবস্থায় দিশেহারা মা কুলসুম আক্তার। দরিদ্র হওয়ায় ছেলের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্যও তার নেই। এ অবস্থায় বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

আহত কামরুল হাসান দেবীদ্বার ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সে উপজেলার গোপালনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।

বুধবার (১৪ আগস্ট) সরেজমিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের ৮ নম্বর বেডে গিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার খবরে দেবীদ্বার উপজেলা সদরে শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল বের করেন। ওই মিছিলে যোগ দেয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কামরুল হাসান। একপর্যায়ে কিছু দুর্বৃত্ত থানায় হামলা চালায়। পরে শিক্ষার্থীরাও সেখানে গিয়ে থানা ঘেরাও করেন।

Advertisement

এসময় পুলিশের গুলিতে কামরুল হাসানসহ অন্তত শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে কামরুলের অবস্থা আশঙ্কাজন হওয়ায় তাকে সেখান থেকে নিয়ে এসে রাত পৌনে ১০টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

বুলেটের আঘাতে তার ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। প্রাথমিকভাবে এক্সটার্নাল ফিক্সেশন (বাহ্যিক স্থিরকরণ) স্থাপন করা হয়েছে। ক্ষত শুকানোর পর চূড়ান্ত সার্জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক। এতে সময় লাগতে পারে ৪-৬ মাস। তবে আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় তার চিকিৎসার ভার বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন কামরুলের মা কুলসুম আক্তার।

কুলসুম আক্তার বলেন, ‘আমার এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। স্বামী ছেড়ে গেছেন ১২-১৩ বছর আগে। এ অবস্থায় ছেলে কামরুলকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। দেবীদ্বার সদরে তিনটি বাসায় কাজ করে চার হাজার টাকা পাই। আড়াই হাজার টাকা বাসাভাড়া দিতে হয়। বাকি দেড় হাজার টাকা দিয়ে কোনোমতে মা-ছেলে দিন পার করছি।’

তিনি বলেন, ‘১০ দিন ধরে আমার ছেলে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। ধার-দেনা করে ৫০ হাজার টাকা তার চিকিৎসায় খরচ করেছি। বর্তমানে আমার হাতে আর কোনো টাকা-পয়সা নেই। এখনো তার পায়ের বড় অপারেশন বাকি রয়েছে। ডাক্তাররা বলেছেন, অনেক দিন সময় লাগবে। কামরুল আমার শেষ ভরসা। তার কিছু হলে আমি মরে যাবো।’

Advertisement

ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কুলসুম আক্তার বলেন, ‘আপনারা আমার ছেলের পাশে দাঁড়ান। আমি একজন অসহায় মা। আমার ছেলে দেশ স্বাধীন করতে আপনাদের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অবশেষে স্বৈরাচার সরকারের পুলিশ বাহিনির গুলিতে আজ সে হাসপাতালের বিচানায় কষ্টে দিন পার করছে। তাকে আপনাদের ছোট ভাই মনে করে অসহায় এই মায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি।’

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেবীদ্বার উপজেলার অন্যতম সমন্বয়ক নাজমুল হাসান নাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওইদিন দেবীদ্বারে পুলিশের গুলিতে শতাধিক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের আমরা জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা দিয়েছি। তবে কামরুলের তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা কুমিল্লার সমন্বয়কের সঙ্গে কথা বলে তার পরিবারের সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যোগাযোগের চেষ্টা করবো।’

এ আন্দোলনে দেবীদ্বার উপজেলায় আওয়ামী লীগের গুলিতে একজন এবং ঢাকায় পুলিশের গুলিতে আটজনসহ উপজেলায় মোট ৯ জন ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের চিকিৎসক আবু হাসান জাগো নিউজকে বলেন, বুলেটের আঘাতে কামরুলের ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা পায়ের মধ্যে বাইরে থেকে রড দিয়ে ফিক্সড করে রেখে দিয়েছি। ক্ষত শুকালে অপারেশন করা হবে। পুরোপুরি ভালো হতে দীর্ঘসময় লাগবে।

জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/জিকেএস