বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর কাজলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জুয়েল। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনিও আন্দোলনে অংশ নেন। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
Advertisement
জুয়েলের বোন বলেন, ‘আমার ভাইকে এমনভাবে গুলি করা হয়, তার কলিজা ভেদ করে বুলেট বের হয়ে গিয়েছিল। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এর চেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হলো ১৫ জুলাই আমার বাবার হার্টে রিং পরানো হয়। আমরা তখন বাবাকে বলতে পারিনি জুয়েল মারা গেছেন।’
বুধবার (১৪ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মানববন্ধনে এভাবেই নিজের ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করেন জুয়েলের বোন। মানববন্ধনে সারাদেশ থেকে আসা শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
জুয়েলের বোন বলেন, ‘আমার ভাই ছাত্র ছিলেন না, কর্মজীবী ছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন। ছাত্রদের সহযোগিতার জন্য রাজপথে নেমেছিলেন। আমার ভাই সবসময় বলতেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা শুধু ছাত্রদের দিয়ে আসেনি, তাতে জনসাধারণেরও অবদান ছিল। এবারও জনসাধারণকে রাজপথে নামতে হবে। আমরা দেখেছি ছাত্রদের সঙ্গে অভিভাবক-শিক্ষকরাও রাজপথে নেমেছিলেন। আমার ভাইও নেমেছিলেন।’
Advertisement
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এ স্বাধীনতা শুধু ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে আসেনি। আমার ভাইয়ের মতো কর্মজীবীরাও রক্ত দিয়েছেন। আমি এক অভাগা বোন, আমার আহত ভাইকে (বিকেল) সাড়ে ৫টার দিকে কাজলায় মিছিলে গুলি করা হয়। বুলেট তার কলিজা ভেদ করে বের হয়ে গিয়েছিল। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো ১৫ জুলাই আমার বাবার হার্টে রিং পড়ানো হয়। আমরা তাকে বলতেও পারিনি যে, আমার ভাই আর দুনিয়ায় নেই।’
মানববন্ধনে জুয়েলের বোন আরও বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মরদেহের পোস্টমর্টেম করতে চেয়েছিল তারা। তবে তার আগেই শিক্ষার্থীরা জোর করে আমার ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে যায়। কারণ ওই সময় শোনা যাচ্ছিল সব মরদেহ গুম করে ফেলা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট দুই ভাই-বোন এখনো শিক্ষার্থী। আমরাও সক্রিয়ভাবে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু আমরা মারা যাইনি, নির্মমভাবে মারা গেলেন আমার কর্মজীবী ভাই। যারা রোজগারে আমাদের সংসার চলতো।’
হত্যাকারী ও নির্দেশদাতার বিচার চেয়ে জুয়েলের বোন বলেন, ‘আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। আমার ভাইয়ের কলিজা ভেদ করে বুলেট ছোঁড়ার নির্দেশ যারা দিয়েছেন তাদের বিচার চাই।’
Advertisement
এমএইচএ/কেএসআর/জেআইএম