দেশজুড়ে

রাজনৈতিক হামলাকে ‌‘সাম্প্রদায়িক’ রূপ দেওয়ার চেষ্টা

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালানোর পর দেশের বেশকিছু স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কিশোরগঞ্জেও কয়েকটি জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটে। তবে এসব হামলার বেশিরভাগই রাজনৈতিক। এগুলোকে ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’ বলে চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। শুক্রবার (৯ আগস্ট) প্রকাশিত ওই তালিকায় কিশোরগঞ্জের তিনটি স্থানে হামলার ঘটনার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

সরেজমিন ওই স্থানগুলোতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক কারণে জেলায় দুটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তারমধ্যে কিশোরগঞ্জ শহরে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকারের বাসার হামলার ঘটনাকে তার ভাই প্রণব কুমার সরকারের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার আগরপুর দাসপাড়া এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক নকুল ভৌমিক ও তার ভাতিজা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুশান্ত ভৌমিককের বাড়িতে হামলা হলেও তা সাম্প্রদায়িক হামলা বলে চালানো হয়েছে। এছাড়া কুলিয়ারচর উপজেলার তারাকান্দিতে হিন্দুদের বাড়িতে হামলার কথা বলা হলেও কাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাই এই এলাকার খবর নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকারের মামা সৌমিত্র সরকার অনিল বলেন, ‘আমার ভাগিনা বিপ্লব কুমার পুলিশের কর্মকর্তা। ৫ আগস্ট বিকেলে দুষ্কৃতকারীরা তার বাসায় হামলা চালিয়েছে।’

Advertisement

প্রতিবেশী দিলীপ রঞ্জন পণ্ডিত বলেন, ‘আমার পাশের বিপ্লব কুমার সরকারের বাসায় হামলা হলেও আমাদের বাড়িতে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া আশপাশের এলাকার কোনো হিন্দু বাড়িতে হামলা ঘটনা ঘটেনি।’

স্থানীয় মিলন মিয়া বলেন, ‘বিপ্লব কুমার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। তাই হয়তো উত্তেজিত জনগণ তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। তার বাসাও হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে আশপাশের আর কোনো হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেনি।’

কথা হয় কুলিয়ারচর উপজেলার আগরপুর এলাকার পরশ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা নকুল ভৌমিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকার বিভিন্ন মানুষের জমি দখল করেছেন। গত ১৫ বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি।’

আওয়ামী লীগ নেতা নকুল ভৌমিক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুশান্ত ভৌমিকের প্রতিবেশী ঝুনু রানী দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা হিন্দু-মুসলিম দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় একত্রে বসবাস করে আসছি। আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি আগেও ছিল, এখনো আছে। আমাদের এলাকায় যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা আওয়ামী লীগের নেতার বাসায়। আমাদের আশপাশের কারও বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেনি।’

Advertisement

জেলার কালীবাড়ি মন্দিরের সভাপতি অসীম সরকার বাঁধন। তিনি বলেন, ‘গঞ্জে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেনি, যা ঘটেছে সব রাজনৈতিক। মাদরাসার ছাত্রসহ এলাকার মুসলিম যুবকরা আমাদের মন্দির পাহারা দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের নেতারা মন্দির পরিদর্শন করেছেন। তারা আমাদের পাশে ছিলেন, আছেন। তারা সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’

কিশোরগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন বলেন, ‘জেলার অনেক জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে বেশিরভাগ জায়গায় স্বার্থন্বেষী মহল সময়টাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে লুটপাট করেছে। অনেক জায়গায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় লুটপাটের মালামাল ফেরত দেওয়া হয়েছে।’

জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক রমজান আলী বলেন, জেলায় যাতে কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না করতে পারে, সেজন্য মন্দির পরিদর্শন ও পাহারায় আমাদের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। আমরা মনে করি সংখ্যালঘু বলে দেশে কিছু নেই। সবাই দেশের নাগরিক।’

এসআর/এএসএম