দেশজুড়ে

স্বাভাবিক হচ্ছে কক্সবাজারের পর্যটন

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে কক্সবাজারের পর্যটন। সৈকতের বেলাভূমিতে আসতে শুরু করেছেন সমুদ্রপ্রেমী দর্শনার্থীরা। হামলা, ভাংচুর ও লুটের ক্ষত মুছে সীমিত পরিসরে খুলছে দোকানপাট, গতি ফিরছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। নিরাপত্তা নিয়ে শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেল থেকে প্রতিদিন সেনাবাহিনীর দেওয়া ব্রিফিংয়ের পর ধীরে সবকিছুর স্বাভাবিকতা আসছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

রোববার (১১ আগস্ট) বিকেলে সৈকতের বেলাভূমিতে গিয়ে দেয়া যায়, কিছু দর্শনার্থী সমুদ্রপাড়ে অবস্থান করে ঢেউ উপভোগ করছেন। এদের বেশিরভাগই স্থানীয়, জেলা ও চট্টগ্রামের আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। শনিবারও একই পরিমাণ লোকজন এখানে এসেছিলেন বলে দাবি করেছেন সৈকত এলাকার ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (১০ আগস্ট) জেলার ছয় থানা ভবন পরিদর্শন করেন রামুর সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামানসহ সেনাবাহিনী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার সদর থানা কম্পাউন্ড এলাকায় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, সব থানার কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। তবে পুলিশের পুরোপুরি সেবা সচল করতে কিছু সময় লাগবে। এজন্য সেনাবাহিনীর পক্ষে সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Advertisement

মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, থানায় কিছু আসবারপত্র, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম লুট হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কক্সবাজারের সব থানার কার্যক্রমে গতি ফিরে আসবে।

সবার সহযোগিতায় কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কক্সবাজার একটি সম্প্রীতিময় জেলা। এখানকার লোকজন শান্তিপ্রিয়। কক্সবাজারে স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে। উন্মুক্ত রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। আগত পর্যটকরা অতীতের মতো নিরাপদে সমুদ্র ও প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম সিকদার বলেন, বেলাভূমিতে দর্শনার্থী আসা শুরু হয়েছে। কিছু পর্যটকও রয়েছেন। তবে, তা উল্লেখ করার মতো নয়। আশা করি সামনে আরও বাড়বে।

এদিকে শহরের সড়কগুলোতে শিক্ষার্থীদের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। ময়লা-আবর্জনাও অপসারণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হাটবাজারে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালান শিক্ষার্থীরা। বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে শহরের প্রতিটি বাজারে মূল্যতালিকা টাঙানো হয়।

Advertisement

সরেজমিন দেখা যায়, সার্কিট হাউজ সড়কের দেওয়ালে বিভিন্ন স্লোগান লিখেছেন শিক্ষার্থীরা। শহরের অভ্যন্তরীণ ও বাস টার্মিনাল এবং লিংকরোড বাজারে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা মূল্যতালিকা টাঙিয়েছেন। থানায় আনসার সদস্যের নিয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা।

গত ৫ আগস্ট বিকেলে কক্সবাজারে থানা, ট্যুরিস্ট ও ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। গাড়ি ও আসবাবপত্র লুট করা হয়। ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে চারটি হোটেলেও। লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয় অর্ধশতাধিক দোকান ও কয়েকটি বাসভবনে। এছাড়া বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বাড়িঘরও ভাঙচুর করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় কক্সবাজারে সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে গত কয়েকদিন ধরে সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/জিকেএস