অর্থনীতি

বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহসীন চৌধুরী

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রকসংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদ থেকে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করার পর মোহাম্মদ মোহসীন চৌধুরীকে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে। মোহাম্মদ মোহসীন চৌধুরী বিএসইসির কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

Advertisement

রোববার (১১ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব ফরিদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এ আদেশ তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে।

পরিবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদ মোহসীন চৌধুরী বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

জনস্বার্থে এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে জানিয়ে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পদত্যাগপত্র দাখিলের তারিখ (১০ আগস্ট) থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে।

Advertisement

গত ৮ মে বিএসইসির কমিশনার হিসেবে মোহাম্মদ মোহসীন চৌধুরীকে চার বছরের মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক।

এদিকে গতকাল শনিবার পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

করোনা আতংকে ২০২০ সালের শুরুর দিকে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামলে লেনদেন বন্ধ করে দেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন।

আরও পড়ুন বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে শিবলীর পদত্যাগ 

এমন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের মে মাসে বিএসইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেব যোগ দেন আরও তিনজন। বিএসইসির দায়িত্ব নিয়ে নতুন কমিশন টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকা শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালু করেন ওই বছরের ৩১ মে।

Advertisement

বন্ধ থাকা লেনদেন চালু করার পাশাপাশি অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কড় বার্তা নিয়ে দেয় শিবলী কমিশন। অনিয়মে জড়িত থাকায় একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়। সতর্ক করা হয় সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-কে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসকে জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করা হয়। পরবর্তীতে আইসিবিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাতিল করা হয় এক ডজন দুর্বল কোম্পানির আইপিও।

এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের প্রশংসা পান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম নেতৃত্বাধীন কমিশন। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারেও। করোনা মহামারির মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার।

কিন্তু এরপর বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয় শিবলী কমিশন। সেই সঙ্গে শিবলী কমিশনের বিরুদ্ধে কারসাজি চক্রকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে। সব থেকে বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয় দরপতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস আরোপের মাধ্যমে।

ফ্লোর প্রাইস দিয়ে একদিকে কারসাজি চক্রকে সুযোগ করে দেওয়া হয়, অন্যদিকে আটকে রাখা হয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেক বিনিয়োগকারী লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছাড়েন।

এরপরও চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে আরও চার বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয় সরকার। দ্বিতীয় দফায় চেয়ারম্যান হওয়ার পর আবারও কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন শিবলী। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে।

সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট এক নির্দেশনায় সই করে বেক্সিমকোসহ ৬ কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেন শিবলী। এমন এক সময় এই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়, যখন বিএসইসির চেয়ারম্যান অফিসে আসছিলেন না এবং কোনো কমিশন সভা হয়নি। অবশ্য শিবলী চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করার পর আজ রোববার ওই নির্দেশনা স্থগিত করেছে বিএসইসি।

এমএএস/জেএইচ/জিকেএস