অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাবা হাজি মোহাম্মদ দুলা মিয়া সওদাগর। পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। তার দাদা নজু মিয়ার নামে আছে হাট। ১৯৯০ সালের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দুলা মিয়ার নামে একটি সড়কের নামকরণ হয় সরকারিভাবে। গত কয়েক বছরে সড়কটির বেহাল দশা হলেও কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। নামফলকটিও ভাঙা।
Advertisement
শুক্রবার (৯ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কের নজু মিয়া হাট থেকে হাজি মোহাম্মদ দুলা মিয়া সড়ক দিয়েই বাথুয়া গ্রামে প্রবেশ করতে হয়। প্রবেশপথের মুখে সড়কটির নামফলকটি ভাঙা। সড়কটি দিয়ে কিছুদূর যেতেই পাওয়া যায় ড. ইউনূসের পারিবারিক বাগানবাড়ি। ফটকের তোরণে তার বাবার নাম। ওই বাড়ির সামনের সড়কেও গর্ত আর গর্ত। বৃষ্টির পানি জমে লোকজনের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ড. ইউনূস নানানভাবে সরকারের হয়রানির শিকার হয়ে আসছিলেন। তার নামে চলছিল কয়েকটি মামলা। পাশাপাশি এই নোবেল বিজয়ীর গ্রামও ছিল উন্নয়নবঞ্চিত।
শিকারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৮২ সালে হাজি দুলা মিয়া সওদাগর নিজের টাকায় সড়কটি মেরামত করেন। ১৯৯১ সালের পর ওয়াহিদুল আলম স্থানীয় সংসদ সদস্য থাকাকালীন হাজি দুলা মিয়া সওদাগরের নামেই সড়কটির সরকারিভাবে নামকরণ করা হয়।
Advertisement
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি অবহেলিত ছিল। এখন দ্রুত সময়ে সড়কটির মেরামত চান এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ায় বাথুয়া গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ জোবরা থেকে দেশের অভিভাবকনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ বলেন, আমাদের গ্রামে বিগত কয়েক বছরে ড. ইউনূসের নাম বললে যারা হুমকিধমকি দিতো তারাই এখন ড. ইউনূস বন্দনা শুরু করেছেন। অথচ এসব নেতার কারণে আমাদের গ্রামের রাস্তাটির কোনো উন্নয়ন হয়নি।
‘গত ৫-৭ বছরে ড. ইউনূসের বাবার নামের সড়কটিও (হাজি মোহাম্মদ দুলা মিয়া সড়ক) মেরামত করা হয়নি। অথচ চট্টগ্রাম কাপ্তাই আঞ্চলিক সড়কের নজু মিয়া (ড. ইউনূসের দাদা) হাটের সঙ্গে লাগোয়া আমাদের গ্রাম। মূল সড়ক থেকে ড. ইউনূসের বাড়ির দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়। এ সড়কটি তারা মেরামত করতে দেয়নি। সড়ক এবড়োখেবড়ো। রোগী নিয়ে যাওয়াও কষ্টসাধ্য।’
জাগির হোসেন নামে এক সিএনজি অটোরিকশাচালক বলেন, ‘অন্তত ১০-১২ বছর ধরে দুলা মিয়া সড়কের মূল অংশের কোনো মেরামত করা হয়নি। গর্তের কারণে গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। অনেক সময় গর্তে গাড়ি আটকে যায়। রোগীদের গাড়িতে নেওয়া যায় না। বর্ষায় খানাখন্দে চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়ে।’
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এ সড়কটি দীর্ঘ বছর ধরে কোনো মেরামত হচ্ছে না। এটি ড. ইউনূসের বাবার নামে করা। সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে কষ্ট হয়।’
এলাকার আরেক তরুণ ব্যবসায়ী মো. আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের অহংকার। যাকে সারা বিশ্ব চেনে। এখন তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ায় আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। আমাদের গ্রামের চলাচলের সড়কটি অনেক অবহেলিত। আশা করছি এখন সড়কটি সংস্কার হবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. ইউনূস ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রাম থেকে তার সামাজিক ব্যবসার মডেল শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে উপকারভোগীরা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসেন দারিদ্র্যসীমা থেকে। ক্ষমতায়ন বাড়ে নারীরও। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে তাকে এবং তার প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরতদের নাজেহাল করা শুরু হয়। দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে মামলার পর মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হয়। রাতারাতি ড. ইউনূসের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় গ্রামীণ ব্যাংকসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এক মামলায় তাকে ছয় মাসের সাজাও দেওয়া হয়।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় ছাত্র-জনতার বিজয়। এর পরই গত ৭ আগস্ট শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ড. ইউনূসের ছয় মাসের সাজা বাতিল করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন তিনি।
এমডিআইএইচ/এএসএ/জিকেএস