গণআন্দোলন থেকে পদত্যাগের দাবি উঠলে তার মানে প্রধান বিচারপতি বুঝতে পারেন- এমনটাই মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
Advertisement
শনিবার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। এ বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, যে দাবি এসেছে সেটা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে। এ আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। যখন আমরা দেখি ৬ বছরের একটা শিশু মারা গেছে, রিয়া গোপ- খুবই আবেগাপ্লুত হয়ে যাই।
তিনি বলেন, এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, প্রতিনিধিত্ব করছেন সমন্বয়করা। এত বড় একটা গণ আন্দোলন, যেখানে ১৬-১৭ বছর ধরে থাকা একটা সরকার, যে সরকারের প্রধানকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। ফলে ওই রকম (শিক্ষার্থীদের) জায়গা থেকে চাপ আসা, প্রত্যাশা আসা র পর প্রধান বিচারপতির কী করা উচিত তা ওনার ওপর ছেড়ে দিলাম।
Advertisement
দুপুরের মধ্যে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবির বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির কী করা উচিত এটা ওনার বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিলাম।’
আরও পড়ুনসচিবালয়ে অফিস করছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রধান বিচারপতিকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে: হাসনাত আব্দুল্লাহআইন উপদেষ্টা বলেন, ‘গণআন্দোলন থেকে পদত্যাগের দাবি উঠলে সেটাকে কতটুকু সম্মান প্রদর্শন করতে হয়, সেটা আমাদের প্রধান বিচারপতি বুঝতে পারবেন বলে আমার প্রত্যাশা থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি একটি ফুল বেঞ্চের সভা ডেকেছিলেন। ছাত্রদের স্ট্যাটাস দেখেছি যে, উনি কারও সঙ্গে আলোচনা করেননি। মনে করা হচ্ছে, স্বৈরাচারী পরাজিত শক্তি ছিল, তাদের পক্ষের একটা মুভ।’
‘এ বিষয়ে কমেন্ট করার আগে আমি কয়েকটি বিষয় বলি। প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়। তার কিছু ব্যাপারে তো প্রশ্ন ছিল। এ আন্দোলনটা যখন হচ্ছে তখন তিনি প্রশ্ন করেছিলেন যে, আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন করা যায় কি না! এ জিনিসটা মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। এছাড়া একটা ব্যাপার ছিল খুব দুঃখজনক, প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর তিনি ছাত্রলীগের কাছ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা নিয়েছেন। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, এটা কোড অব কন্ডাক্টের লঙ্ঘন ছিল। তিনি ডিবি পুলিশের (সাবেক) প্রধান হারুন অর রশীদের কাছ থেকে সোনার তরবারি উপহার নিয়েছিলেন। তিনি বিদেশে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসায় থাকেন। এজন্য তাকে (প্রধান বিচারপতি) নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল।’
Advertisement
আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি আবার ফুল বেঞ্চের মিটিং ডেকেছেন। এটা একটা অনভিপ্রেত ঘটনা। এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটলেই ভালো। আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে আমাদের সংবিধান ও মানবাধিকার রক্ষার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। এমন কিছু কারোরই করা উচিত না, যা ছাত্র-জনতার যে গণআন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান সেটার বিপক্ষে যায়। সুপ্রিম কোর্টকে এটার বিপক্ষে দাঁড় করানো কারও উচিত না।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, দেশের পুলিশ বাহিনীকে এই আন্দোলনের বিপরীতে দাঁড় করানোয় কী পরিণতি হয়েছে। এমন কিছু হোক সেটা তো আমরা কখনোই চাইবো না। আমরা আশা করবো- সবার যাতে শুভবুদ্ধির উদয় হয়। ছাত্র-জনতার যে গণআন্দোলন হয়েছে সেটার আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমরা সবাই যাতে সম্মান দেখাই।’
আরএমএম/কেএসআর/এমএস