ধর্ম

দাম্ভিক বাদশাহ নমরুদের পতন যেভাবে হয়েছিল

আল্লাহর নবি ও খলিল ইবরাহিমের (আ.) এক অত্যাচারী বাদশাহকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন, তার নাম ছিল নমরুদ। তিনি প্রায় পুরো দুনিয়ায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। ক্ষমতার দম্ভে তিনি নিজেকে খোদা বা ইলাহও দাবি করেছিলেন। তিনি ভাবতেন, মানুষের জীবন-মৃত্যু তার হাতে; তিনি যাকে চান হত্যা করতে পারেন, যাকে চান বাঁচিয়ে রাখতে পারেন।

Advertisement

কোরআনে নবি ইবরাহিমের (আ.) সাথে তার বিতর্কের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡ حَآجَّ اِبۡرٰهٖمَ فِیۡ رَبِّهٖۤ اَنۡ اٰتٰىهُ اللّٰهُ الۡمُلۡكَ اِذۡ قَالَ اِبۡرٰهٖمُ رَبِّیَ الَّذِیۡ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ قَالَ اَنَا اُحۡیٖ وَ اُمِیۡتُ قَالَ اِبۡرٰهٖمُ فَاِنَّ اللّٰهَ یَاۡتِیۡ بِالشَّمۡسِ مِنَ الۡمَشۡرِقِ فَاۡتِ بِهَا مِنَ الۡمَغۡرِبِ فَبُهِتَ الَّذِیۡ كَفَرَ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ

তুমি কি সে লোককে দেখনি, যে পালনকর্তার ব্যাপারে বাদানুবাদ করেছিল ইবরাহিমের সাথে এ কারণে যে, আল্লাহ সে ব্যাক্তিকে রাজত্ব দান করেছিলেন? ইবরাহিম যখন বললেন, আমার পালনকর্তা হলেন তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমি জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইবরাহিম বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সূর্য উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে এবার তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। তখন ওই কাফের হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ জালিমদের সঠিক পথের দিশা দেন না। (সুরা বাকারা: ২৫৮)

Advertisement

কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করে বলেছেন তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে আল্লাহ তাদের ইমারত ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন। কোরআনের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, এখানে নমরুদের কথা বলা হয়েছে। নমরুদ আকাশে ওঠার জন্য একটি ইমারত বানিয়েছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় তার বানানো ওই ইমারত ভেঙে পড়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন,

قَدۡ مَكَرَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ فَاَتَی اللّٰهُ بُنۡیَانَهُمۡ مِّنَ الۡقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَیۡهِمُ السَّقۡفُ مِنۡ فَوۡقِهِمۡ وَ اَتٰىهُمُ الۡعَذَابُ مِنۡ حَیۡثُ لَا یَشۡعُرُوۡنَ

তাদের পূর্বে যারা ছিল তারাও চক্রান্ত করেছিল। ফলে আল্লাহ তাদের ইমারতকে মূল থেকে উৎপাটিত করেছিলেন আর ওপর থেকে ছাদ তাদের ওপর ভেঙ্গে পড়ল, আর তাদের প্রতি শাস্তি পতিত হল এমন দিক থেকে যা তারা এতটুকু টের পায়নি। (সুরা নাহল: ২৬)

বর্ণিত রয়েছে, নবি ইবরাহিমের (আ.) আকাশের রব অর্থাৎ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে হত্যা করার জন্য নমরুদ আকাশের দিকে তীর ছুড়েছিলেন। আল্লাহ তার তীরগুলো রক্তরঞ্জিত অবস্থায় মাটিতে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এতে নমরুদ আনন্দে আত্মহারা হয়ে উল্লাস করেন এবং দাবি করতে থাকেন তিনি আকাশের রবকে হত্যা করে ফেলেছেন!

Advertisement

এই চরম দাম্ভিক খোদাদ্রোহী বাদশাহর পতন হয়েছিল অত্যন্ত করুণভাবে। আল্লাহর তার বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র প্রাণী মশার একটি বিশাল বাহিনী পাঠিয়েছিলেন। ঝাঁকে ঝাঁকে মশা এসে তার সৈন্যবাহিনীকে ঘিরে ধরে, তাদের নাক দিয়ে মাথায় ঢুকে যায়। সৈন্যদের মধ্যে তীব্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে তারা অন্ধের মতো তীর-তরবারি চালাতে থাকে এবং নিজেদের আঘাতে নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে।

নিজের সেনাবাহিনীর অবস্থা দেখে নমরুদ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু একটি মশা তাকেও তাড়া করে এবং তার নাক দিয়ে মাথায় ঢুকে যায়। যন্ত্রণায় অস্থির অবস্থায় তিনি প্রাসাদে ফিরে যান এবং নিজের জুতো খুলে নিজের মাথায় আঘাত করতে থাকেন। মাথায় জুতো দিয়ে আঘাত করলে তার যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হতো। তাই মাথায় জুতো দিয়ে আঘাত করার জন্য তিনি একজন সার্বক্ষণিক কর্মচারী নিয়োগ করেন। এ অবস্থায় তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে তিনি দীর্ঘ কাল বেঁচে থাকেন। এক পর্যায়ে মাথায় আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়।

ওএফএফ/জিকেএস