ফিচার

কেন তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তি বলা হয়?

আপনি কতটা ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী বলুন তো? আসলে কে কতটা ভাগ্যবান তা শুধু সেই জানে। তবে ভাবছেন আজকের শিরোনামটা কীভাবে এলো। ফ্রেন সিলাককে বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ মনে করা হয়। কিন্তু কেন ব্যক্তিটিকে সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ বলা হয়, এমন প্রশ্ন মনে আসতেই পারে। এর যথেষ্ট কারণ আছে বটে!

Advertisement

ফ্রেন সিলাকের জীবনেরই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেছে বিপর্যয় আর বিপত্তি। বিপদ যেন তার পিছুই ছাড়েনি কখনো, সারাক্ষণ ছায়ার মতো সঙ্গী হয়ে ছিল। বয়স তখন তার ৩২-৩৩ হবে। জীবনে কখনো বিমানে ওঠার অভিজ্ঞতা ছিল না।

একদিন কাজের জন্য বিমানে ওঠার সুযোগ আসে। নির্দিষ্ট দিনে পৌঁছে গেলেন বিমানবন্দরে। উঠে পড়লেন বিমানে। সেই বিমান পড়লো দুর্ঘটনার কবলে। কিন্তু ফ্রেন দুর্ঘটনায় পড়া বিমান থেকে সোজা খড়ের গাদার উপর ভূপতিত হয়ে জানে রক্ষা পেলেন।

শুধু তাই নয়, লাইনচ্যুত ট্রেন থেকে নদীতে গিয়ে পড়া, দু-তিনবার বাস দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া, একবার গিরিখাতের মুখ থেকে জ্যান্ত ফিরে আসা, ভস্মীভূত গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা আর তারপর ১ লাখ মার্কিন ডলারের লটারিতে জয়ী হওয়া- ভাগ্যদেবী যার উপর এতটা সুপ্রসন্ন। এবার বলুন এমন একজন মানুষকে আপনার ভাগ্যবান আখ্যা দিতে এক মিনিটও দেরি হবে কি না।

Advertisement

আরও পড়ুন বাংলাদেশের যত ছাত্র আন্দোলন 

১৯২৯ সালের ১৪ জুন ক্রোয়েশিয়ায় জন্ম ফ্রেন সিলাকের। কিছুদিন পরই তার বয়স হতে যাচ্ছে ৯৫ বছর। এরই মধ্যে সাংবাদিকদের কাছে তিনি ‘ওয়ার্ল্ড’স লাকিয়েস্ট ম্যান’ এবং ‘ওয়ার্ল্ড’স লাকিয়েস্ট আনলাকিয়েস্ট ম্যান’ খেতাব জিতেছেন।

কর্মজীবনে তিনি ছিলেন একজন সংগীত শিক্ষক। ৭ বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে আর ৪ বার ব্যর্থ বিবাহের আঘাত সহ্য করে এখনো তিনি দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে বয়সের ভারেও তার এমন স্মৃতিভ্রম হতে পারে বলে মনে করেন সাইকোলজিস্টরা। তবে মাইক্রোবাস সহ গাড়িতে আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনাগুলোর রেকর্ড চেক করে সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি হতে কম কষ্ট করতে হয়নি ফ্রেন সিলাককে।

প্রথম দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরেন ১৯৬২ সালে। সারাজেভো থেকে ডুব্রোভনিকের রেলপথে যাওয়ার সময়, অদ্ভুত ভাবে তিনি যে ট্রেনে ছিলেন সেটি একটি নদীতে পড়ে যায়। সতেরো জন যাত্রী নিহত হয়েছিল সেই দুর্ঘটনায়। সেলাক প্রাণে রক্ষা পেলেও ত্রা একটি হাত ভেঙে গিয়েছিল। ভাঙা হাত নিয়ে সাঁতরে সেদিন তীরে এসে প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছিলনে।

পরের বছর, ফ্রেন জাগরেব থেকে রিজেকা যাচ্ছিলেন। এবার ছিলেন বিমানে। মাঝ আকাশে বিমান থেকে একটি দরজা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, বিমান গিয়ে একটি খাদের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। বিমানের উনিশ জন আরোহী প্রাণ হারিয়েছিলেন, সেলক গিয়ে পড়েন একটি খড়ের গাদায়। ভাগ্যক্রমে এবারও বেঁচে যান তিনি। কিছুদিন হাসপাতালে থেকে বাড়ি ফিরে আসেন।

Advertisement

১৯৬৬ সালে ফ্রেন পড়েছিল বাস দুর্ঘটনায়। তিনি যে বাসে চড়েছিলেন সেটি আবার নদীতে পড়ে যায়। সেখানে চারজন হতাহতের ঘটনা ঘটলেও তিনি অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন। এরপর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে অস্বাভাবিক কিছু বছর কেটে গেছে। সেলাক জানায় যে তার গাড়ির জ্বালানি ট্যাঙ্ক মোটরওয়েতে বিস্ফোরিত হয়েছিল।

১৯৭৩ সালে আরেকটি অদ্ভুত গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। ১৯৯৫ সালে আবারও একটি বাস দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরে এসে খবরের শিরোনাম হন। এর ঠিক পরের বছর অমর মানুষের সপ্তম এবং শেষ বিখ্যাত বিপর্যয় এসেছিল। একটি ট্রাক তার স্কোডার দিকে ব্যারেল করে এসেছিল যখন সে একটি পাহাড়ি রাস্তার চারপাশে ঘুরছিল। তার গাড়িটি বিস্ফোরিত হলেও তার আগেই তিনি প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফেরেন।

আরও পড়ুন দু’পা নেই জন্ম থেকেই, বাধা হতে পারেনি সাফল্যের পথে  ইন্টারনেট ব্যবহারে কোনো টাকা লাগে না যে দেশে 

সূত্র: রিপ্লেস বিলিভ ইট অর নট

কেএসকে/জিকেএস