‘দেশের ব্যাংকখাতের অবস্থা অনেকটা নাজুক। ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে আর্থিকখাতের সংস্কারের প্রয়োজন। অর্থনীতির স্বার্থে জরুরিভিত্তিতে কয়েকটি অধ্যাদেশ করতেই হবে নতুন সরকারকে। কারণ টাকা দরকার, বিনিয়োগও দরকার। বিশেষ করে অর্থপাচার ও খেলাপির ব্যাপারে জরুরি অধ্যাদেশ করতে হবে।’
Advertisement
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইয়াসির আরাফাত রিপন।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর-ডেপুটি গভর্নর নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কয়েকজন ডেপুটি গভর্নর হেনস্তার শিকার হন, গভর্নরেরও পদত্যাগ চান তারা। নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় এমন হলে আর্থিকখাতের কোনো জটিলতা তৈরি হবে কি না?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: নতুন সরকার আসছে। সেখানে গভর্নর-ডেপুটি গভর্নর একদিনের ব্যাপার। মাঝে আবার দুদিনের ছুটি পড়ছে। ওনাকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। সরকার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা ডেপুটি গভর্নর। তবে তারা কাজ করবেন না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই ধরনের কাজ করে। এর একটি অপারেশনাল অপরটি পলিসিগত দিক।
Advertisement
এখানে দু-একদিনের জন্য পলিসির প্রয়োজন হবে না। স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাহী কর্মকর্তারা কোনো আদেশ দিতে পারেন কি না মনে নেই। তবে ইমার্জেন্সি হলে না পারার কোনো কারণও নেই। আবার ছোট কোনো সমস্যায় নির্বাহী পরিচালকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এখানে আর্থিকখাতের জটিলতা হওয়ার সুযোগ নেই।
আমি মনে করি দক্ষ, পেশাদার, সৎ, দেশপ্রেমিক লোকদের দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে ওপরের স্তরগুলো তৈরি করতে হবে, সাজাতে হবে। একটা সাংবিধানিক পদ হতে হবে, হস্তক্ষেপে না। আস্থার সংকট কাটাতে অবশ্যই দেশপ্রেমিক নাগরিকের বিকল্প নেই।
জাগো নিউজ: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযোগ-ক্ষোভের কারণ কী, কেন অনিয়ম তৈরি হচ্ছে?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। এটাকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। আমি মনে করি দক্ষ, পেশাদার, সৎ, দেশপ্রেমিক লোকদের দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে ওপরের স্তরগুলো তৈরি করতে হবে, সাজাতে হবে। একটা সাংবিধানিক পদ হতে হবে, হস্তক্ষেপে না। আস্থার সংকট কাটাতে অবশ্যই দেশপ্রেমিক নাগরিকের বিকল্প নেই।
Advertisement
জাগো নিউজ: খেলাপি ঋণ কমাতে নতুন সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: ২০০৯ সাল থেকে ঋণ খেলাপিদের জামাই আদর করা হয়েছে। নতুন সরকারকে অবশ্যই খেলাপি ও মুদ্রা পাচারের বিরুদ্ধে, ট্যাক্স না দেওয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন সরকারে এখন যাদের নাম শোনা যাচ্ছে অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে তারা সবাই ডায়নামিক, অর্থনীতির মানুষ।
যে পলিসি ছিল ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানে সব বলা আছে। বিশষ করে ঋণ পুনঃতফসিল করা, কজন পরিচালক হবেন, কতদিনের জন্য হবেন এটা সুন্দরভাবে ছিল। সেটা চাইলেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব, কারণ সংসদ নেই, জটিলতাও হবে না। রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ দিয়েই এগুলো করবেন। আমি মনে করি নতুন সরকার এগুলো অগ্রাধিকার দিতে বদ্ধপরিকর।
জাগো নিউজ: কী ধরনের অধ্যাদেশে হতে পারে, কোন বিষয়টা প্রাধান্য পেতে পারে?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: এখানে সংস্কার প্রয়োজন। কতগুলো বিষয়ে খুব দ্রুততম সময়ে অধ্যাদেশে করতে হবে। আমরা যারা অর্থনীতি নিয়ে কথা বলি সবাই বলে আসছি একটা ব্যাংকিং কমিশনের কথা। কমিশন হলে বিস্তারিত দেখবেন, ভবিষ্যতের নীতিটা দেখবেন। কিন্তু খেলাপি, পাচার ও ট্যাক্সের ব্যাপারে অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে হবে। কারণ আমারতো টাকার দরকার। টাকা দিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে প্রবৃদ্ধি কম হোক। কিন্তু আমি যদি ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থান না করতে পারি তাহলে সাধারণ মানুষের যে কষ্টটা গত কয়েক বছর হয়েছে এটার প্রতিফলন হবে না।
ড. ইউনূস নিজেও অর্থনীতির ভালো ছাত্র ছিলেন, উনি ভালো বুঝবেন এগুলো। যারা পরামর্শ (উপদেষ্টা) দেবেন তারাও ভালো। আমরা যা বলেছি পাচারের ব্যাপারে তো একটা অধ্যাদেশ করতেই হবে।
জাগো নিউজ: পাচারকারীদের অ্যাকাউন্ট এখনো খোলা, টাকা উত্তোলন হচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলোতেও টাকা নেই, এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: ড. ইউনূস নিজেও অর্থনীতির ভালো ছাত্র ছিলেন, উনি ভালো বুঝবেন এগুলো। যারা পরামর্শ (উপদেষ্টা) দেবেন তারাও ভালো। আমরা যা বলেছি পাচারের ব্যাপারে তো একটা অধ্যাদেশ করতেই হবে। তবে ব্যাংকের একটা ব্যাপার আছে। ব্যাংকের ওপরে মানুষের আস্থাটা থাকতে হবে।
মানুষকে আস্থা নিয়ে বলতে হবে যে, যাদের কাছে টাকা আছে ব্যাংকে জমা দেন। এককোটি টাকা পর্যন্ত বিমার আওতায় আসবে। এটা করলে বহু টাকা এসে যাবে ব্যাংকে। আবার এটা না করে অ্যাকাউন্ট জব্দ করা বা ফ্রিজ করা বেশি বেশি হলে ব্যাংকিং সিস্টেমের ওপর থেকে আস্থা চলে যাবে গ্রাহকের। সবদিক বিবেচনায় নিতে হবে।
ইএআর/এএসএ/জেআইএম