বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন শেখ হাসিনা। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে ছাত্র নেতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সম্মত হয় সবাই। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় শপথ নেবে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি কূটনীতিকদের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। দিক-নির্দেশনা না পাওয়ায় তারা কাজ করতে পারছেন না। নতুন সরকারের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
Advertisement
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ পরিস্থিতিটাই একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। আপাতত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর অনেক কিছুর সমাধান হয়ে যাবে। আমি আশা করব যারা দায়িত্বে আসবে তাদের বিবেচনা নিয়েই কাজ করবে। এখানে কিছু কিছু রদবদল হবেই। অনেক সময় আমরা দেখি অনেক অ্যাপয়েন্টমেন্ট বিতর্কিত থাকে, আমি সুনির্দিষ্টভাবে কারো কথা বলছি না। যদি প্রয়োজন হয় কোনো কোনো পরিবর্তন তো আনতেই হবে। তবে মনে হয় না প্রতিশোধমূলক কোনো কিছু করা হবে। আর ঢালাওভাবে এখন সেটি সম্ভবও না। কারণ ডিপ্লোমেসিতে তো একটা কন্টিনিউটি থাকতে হয়। যারা সরকারে থাকবে তাদের জন্যেও এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে। পুরো বিশ্বই আমাদের দেখছে।’
আরও পড়ুন অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ রাতে ড. ইউনূসকে নিয়ে কী বলছেন ভারতের বিশেষজ্ঞরা? অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র দেশে সত্যায়িত ডকুমেন্ট অন্য দেশে সত্যায়ন লাগবে নাবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে চলে যান। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করার পর অন্য মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা ত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙ্গে দিয়েছেন। ফলে গঠিত হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে থাকবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারে ১৫ জন সদস্য থাকতে পারেন।
Advertisement
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানা গেছে। ফলে পেশাদার কূটনীতিকদের নিয়োগও বাতিল হবে। এক্ষেত্রে সেখানেও আসবে নতুন মুখ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে এখন আমরা অনেকটা অভিভাবকহীন। সরকার পতনের শেষ দিকেও বেশ কিছু দেশে রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার ছাড়াও মিশনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে পেশাদার কূটনীতিকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন তারা সেখানে জয়েন করবেন কিনা, কিংবা তাদের সেই অর্ডার বাতিল হবে কিনা সেগুলো এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন বিদেশি মিশনে অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, সেক্ষেত্রে কিছু জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আবার অনেক দেশের রাষ্ট্রদূতরা রাজনৈতিকসহ নানাভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, তারা পদে থাকবেন কিনা সেটি নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে এক প্রকার অনিশ্চয়তার মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে সবাইকে।’
সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোফাজ্জল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা বিদেশে বিভিন্ন মিশনে কর্মরত আছেন তারা অনেকে দিশেহারা হয়ে আছেন। কারণ তারাতো আমাদের মতো ঢাকায় অবস্থান করছেন না। তাদেরকে পরিস্থিতি নিয়ে কেউ ব্রিফও করছেন না। কারণ এখন কোনো মন্ত্রণালয়ই সেভাবে কাজ করছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই উচিত হবে বিভিন্ন দেশে মেসেজ পাঠানো যে সরকার কিভাবে এখন পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। আমি নিশ্চিত সব রাষ্ট্রদূত এই নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। এই নির্দেশনাগুলো চলে যেতে হবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে।’
মোফাজ্জল করিম আরও বলেন, ‘আমি মনে করি বৃহস্পতিবার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাতেই এই সংক্রান্ত কাজগুলো শেষ করে ফেলতে হবে যাতে রাষ্ট্রদূতরা যেই নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন, সেটা পাওয়ার পরে তারা কাজে লেগে যেতে পারেন। তখন একবার কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা চলে গেলে রাষ্ট্রদূতরা দিকনির্দেশনা পেয়ে যাবেন এবং তারা যার যার নিজ দেশে তাদের কাজ করবেন। পরিস্থিতি খুব দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
Advertisement
আইএইচআর/এমএমএআর/জিকেএস