খেলাধুলা

ক্রিকেটাঙ্গনে নান্নু-সুমনের কণ্ঠে নতুনের বার্তা

শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ব্যাপক গণবিক্ষোভ ও জনরোষের মুখে পদত্যাগ করে গোপনে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। প্রায় একমাসের আন্দোলনের পর গতকাল সোমবার (৫ আগস্ট) দেশ ছাড়েন তিনি।

Advertisement

শেখ হাসিনার পদ এবং দেশ ত্যাগের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। গোটা দেশে একটা রদবদল ও পরিবর্তনের আভাষ। চারদিকে পরিবর্তনের ছোঁয়া দৃশ্যমান।

প্রশ্ন উঠেছে, দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও কী পরিবর্তনের ছোয়া লাগবে? নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে ক্রিকেট বোর্ডে গত একযুগ ধরে যে পরিচালক পর্ষদ আছে, সেটাই কী বহাল থাকবে? নাকি এবার তাতে পরিবর্তন ঘটবে?

এ প্রশ্ন অনেক ক্রিকেট অনুরাগির মনেই উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। বলে রাখা ভাল, পেশাদারিত্বে কমতি, অদক্ষতা আর নিয়ম-শৃঙ্খলায় ব্যাপক ঘাটতির কারণে দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক হিসেবে কাঙ্খিত উন্নতি করতে ব্যর্থ বিসিবি। অনেক ক্ষেত্রেই অসচ্ছ্বতা ও অনিয়ম সঙ্গী হয়ে আছে।

Advertisement

কাজেই ক্রিকেটপ্রেমীদের একটা অংশ ক্রিকেট বোর্ড ব্যবস্থপনায় পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার। এখন বিসিবিতে পরিবর্তন বা রদবদল ঘটবে কিনা, তার উত্তর দেবে সময়।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিবি পরিচালক পর্ষদে রদবদল কিছু ‘যদি’ ‘তবে’র ওপর নির্ভর করছে। সবার আগে দেখতে হবে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির বিধান কী? একটা দেশের সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে কী ক্রিকেট বোর্ড ব্যবস্থাপনা পরিষদেও পরিবর্তন আনতে পারে? সেখানে আইসিসির কোন বিধি-নিষেধ আছে কি না? তা আগে খুঁটিয়ে দেখতে হবে।

বলে রাখা ভাল, অতীতে দেশের ক্রিকেটে এমন নজির না থাকলেও ফুটবলে এমন উদাহরণ কিন্তু অছে। ২০০১ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির তৎকালীন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটল বাফুফের আগের কমিটি (আওয়ামী লিগ সরকারের আমলের কমিটি) বাতিল করে দিয়েছিলেন।

ফুটবলের বিশ্ব সংস্থা ফিফা সঙ্গে সঙ্গে বাফুফেকে বহিষ্কার করেছিল। মানে ফিফার সংবিধানে কোন নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ না হওয়ার আগে সে দেশের সরকার পরিবর্তন ঘটলেও ফেডারেশনের কমিটি বাতিলের বিধান নেই। তাই বাফুফের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ফিফা। পরে অবশ্য ফজলুর রহমান পটল বাফুফের কমিটিকে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেন।

Advertisement

এখন আইসিসির ক্ষেত্রেও তেমন কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি না? তা খুঁটিয়ে দেখতে হবে সবার আগে। পাশাপাশি দেশের ক্রীড়া ফেডারেশন গুলোর অভিভাবক ক্রীড়া পরিষদ বা এনএসসিরও নিজস্ব আইন আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিবির বর্তমান কমিটি বাতিল করতে হলে তাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গঠণতন্ত্র সংশোধন ও বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন। এখন দেখতে হবে, গত একযুগ বিসিবিতে অবহেলিত ও অবমূল্যায়িত ক্রিকেট সংগঠকরা বিসিবির বর্তমান পরিচালক পর্ষদ পরিবর্তনের দাবিতে কতটা সোচ্চার হন?

লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, দেশের ক্রিকেটে গত ১২-১৩ বছরের উপেক্ষিত, পরিক্ষীত ও প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট সংগঠকরা ক্রিকেট বোর্ডে পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার হবেন। তার একটা আভাষ মিললো আজ ৬ আগস্ট। মঙ্গলবার দুপুরের পরই বোর্ডে দেখা মিললো একঝাঁক ক্রিকেট সংগঠকের।

তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে দেখা গেল বিসিবির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বোর্ড পরিচালক রফিকুল ইসলাম বাবুকে। এছাড়া ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পদত্যাগি সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ক্রিকেটার দেবব্রত পাল, প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট সংগঠক তারিকুল ইসলাম টিটুসহ আরও কয়েকজন ক্লাব অর্গানাইজারও এ সময় বোর্ডে এসেছিলেন।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, জাতীয় দলের দুই সাবেক অধিনায়ক ও জাতীয় দলের দুই সাবেক নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং হাবিবুল বাশারও রফিকুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে আজ মঙ্গলবার বিসিবিতে এসেছিলেন এবং উপস্থিত সংবাদকর্মীদের সাথে কথাও বলেছেন।

নান্নু ও সুমনের কন্ঠে নতুনের বার্তা। প্রধান নির্বাচক থেকে অপসারিত নান্নুর কথা, আমরা চাই সুশাসন এবং সুন্দরভাবে আমাদের দেশটাকে যাতে এগিয়ে নিতে পারি। সমাজে ভালোমতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। এখন এটাই আমাদের সবার চাওয়া।

নান্নু যোগ করেন, এখন সবার সহযোগীতায় আমাদের ক্রিকেটটাকে চলমান রাখতে হবে। যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলো আছে, ‘এ’ টিমের সফর আছে, সামনে পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ আছে- এগুলো যাতে সময়মতো হয়, এটায় আমাদের সবার সহযোগিতা দরকার এবং এখানে সুন্দরভাবে, সবার সহযোগীতায় ক্রিকেটাকে আমরা এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা বদ্ধ পরিকর।’

হাবিবুল বাশার সুমনও নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন করে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছি। আমি আশাবাদী যে আমাদের যেসব প্রোগ্রামগুলো ছিল- সেগুলো সবকিছু ঠিকমতো চলবে। কারণ, সামনে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়। অনেক খেলা আছে, আমাদের বিশ্বকাপ আছে, আমাদের জাতীয় দলের সফর আছে।’

এআরবি/আইএইচএস/