লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে আরও দুজন মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে তারা মারা যান। এ নিয়ে জেলায় সহিংসতায় একদিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ জনে।
Advertisement
রোববার (৪ আগস্ট) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার ১০ জনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- ওসমান গনি, মো. কাউসার, সাদ আল আফনান, তৌহিদ কবির, রাফি, রিয়াজ চৌধুরী, আহমেদ শরীফ, হারুন মোল্লা, সিফাত চৌধুরী ও রাসেল। নিহতের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ সমর্থক। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে গুলিবিদ্ধসহ ১৫১৫ জন আহত হন। একপর্যায়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারীরা শহরের তমিজ মার্কেট এলাকার তার বাসা ঘেরাও করেন। এসময় চেয়ারম্যান টিপু দলবল নিয়ে বাসায় ছিলেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিপুর বাসার ছাদ থেকে গুলি করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়ছেন।
Advertisement
পরে ক্ষুদ্ধ আন্দোলনকারীরা পেট্রল ঢেলে টিপুর বাসায় আগুন লাগিয়ে দেন। এক পর্যায়ে টিপুর বাসা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় পিটিয়ে আহত করা হয় ২০-২৫ জনকে। এরমধ্যে ৫-৬ জনের মরদেহ সড়কে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ যাননি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে যান। তবে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে পারেননি। এরপর রাত ১২টার পর পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
এছাড়া আন্দোলনকারীরা লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুুদুন্নবী সোহেলের বাসভবনে ভাঙচুর করে আগুন দেন। ঘটনার সময় নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বাসায় ছিলেন না।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অরুপ পাল বলেন, বিকেল পর্যন্ত আহত ৫৩ জনকে হাসপাতাল আনা হয়েছে। এর অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। মৃত অবস্থায় ৩ জনকে আনা হয়। ঢাকা নেওয়ার পথে একজন মারা গেছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদারকে বলেন, আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছি। ভেতরে কোনো মরদেহ বা কেউ আটকা পড়েছেন কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত পরে বলা যাবে।
Advertisement
কাজল কায়েস/কেএসআর