দেশজুড়ে

অসহযোগ আন্দোলন: সংঘর্ষে নিহত ৩৩

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রথমদিন রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরে চারজন, সিলেটে দুজন, ভোলায় একজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, ফেনীতে পাঁচজন, পাবনায় তিনজন, বগুড়ায় দুজন, বরিশালে একজন, কুমিল্লায় একজন, রংপুরে চারজন, মাগুরায় চারজন ও মুন্সিগঞ্জের তিনজন রয়েছেন।

Advertisement

লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এরমধ্যে তিনজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অরুপ পাল চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরএমও অরুপ পাল বলেন, বিকেল পর্যন্ত ৫৩ আহত রোগীকে হাসপাতাল আনা হয়েছে। অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

তিনি আরও জানান, মৃত অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালে আনা হয়। ঢাকা নেওয়ার পথে একজন মারা গেছেন।

সিলেট

সিলেটের গোলাপগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহতরা হলেন উপজেলার ধারাবাহর গ্রামের মকবুল আলীর ছেলে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঠিকাদার (খাবার সরবরাহকারী) তাজ উদ্দিন (৪৩) ও শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)।

Advertisement

ভোলা

ভোলায় সহিংসতার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে জসিম উদ্দিন (৪৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি ভোলা পৌর নবীপুর এলাকার আবু তাহেরের ছেলে ও ভোলার শহরের নতুন বাজার এলাকায় ছাতা ব্যবসায়ী।

নিহতের ভাই মো. সবুজ জানান, তার ভাই জসিম উদ্দিন ভোলার শহরের নতুন বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে বসে ছাতা বিক্রি ও মেরামত করতেন। আজ দুপুরের দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রিপন কুমার সরকার জানান, তিনি লোকমুখে শুনেছেন একজন মারা গেছে।

কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেলে একজন ও সদর হাসপাতালে দুজনের মরদেহ রয়েছে।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন ও সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আকরাম উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফেনী

ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের অসহযোগ কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অনেকে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঁচজনের মরদেহ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আরএমও ডা. আসিফ ইকবাল। তবে তাদের নাম- পরিচয় জানা যায়নি।

রংপুর

রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন রংপুর নগরীর পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী খরশু মিয়া। অপর দুজনের মধ্যে একজন হারাধন রায়ের সহযোগী।

রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্দার রুমের দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মুন্সিগঞ্জ

মুন্সিগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। নিহতরা হলেন রিয়াজুল ফরাজী (৩৫), মো. সজল (৩০) ও ডিপজল (১৯)। মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বরিশাল

বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। তার নাম টুটুল চৌধুরী (৬০)। তিনি বরিশাল মহানগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

দুপুরে বরিশাল নগরের বটতলা এলাকার করিম কুটিরের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সজিব আহমেদ।

কুমিল্লা

কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে রুবেল (৩৩) নামের একজন নিহত হয়েছেন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে দেবীদ্বার পৌরসভার বানিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত রুবেল দেবীদ্বার পৌরসভার বারেশ্বর এলাকার ইউনুস মিয়ার ছেলে।

মাগুরা

মাগুরা সদর ও মহম্মদপুর উপজেলায় বিক্ষোভকারী, বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষে এক ছাত্রদল নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হচ্ছেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী (২৫), মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে সুমন শেখ (১৯), একই উপজেলা সদরের ইউনুস মিয়ার ছেলে আহাদ (১৮) ও শ্রীপুরের রায়নগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ইতিহাসের ছাত্র মোহাম্মদ ফরহাদ (২২)। আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন।

বগুড়া

বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এদের মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ।

বগুড়ার সাতমাথায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসময় বগুড়া টিএনটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওদুদ জানান, হাসপাতালের মর্গে দুটি মরদেহ রয়েছে।

পাবনা

পাবনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি চলাকালে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন।

নিহতরা হলেন সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিনের ছেলে জাহিদুল (১৮), দোগাছি গ্রামের কালামের ছেলে মো. মাহাবুল (২০) ও ফাহিম (১৭)।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. জাহিদুল ইসলাম তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এসআর/এএসএম