কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় ৮১ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৫৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪ জন, খুলনা বিভাগের ৬ জন ও রংপুর বিভাগের ৩ জন। এর আগে বৃহস্পতিবার আরও তিন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
Advertisement
শুক্রবার (২ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রশিদুল আলম ৩৭ জন ও ঢাকার সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ৫ জন শিক্ষার্থীর আইনজীবী জামিন আবেদন করেন।
শুনানি শেষে পরীক্ষার্থী বিবেচনায় তাদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন থানার মামলায় বিচারক রশিদুল আলম ও ঢাকা জেলার মামলায় বিচারক মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিন পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপথ ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড আদালতে উপস্থাপন করে পরীক্ষার্থী বিবেচনায় জামিনের আবেদন করা হয়।
Advertisement
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান সহিংসতা ও নাশকতামূলক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া মামলায় গ্রেফতারকৃত এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা বিবেচনায় করে আইনমন্ত্রী তাদের জামিনের বিশেষ উদ্যোগ নেন। এজন্য তিনি শিক্ষার্থীদের দ্রুত জামিন দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে সারাদেশের প্রসিকিউশন টিমকে (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও ঢাকা সিএমএম আদালত থেকে ৩৭ জন এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালত থেকে ৫ জন পরীক্ষার্থী জামিন পেয়েছেন। আগামী ১১ আগস্ট থেকে তাদের স্থগিতকৃত পরীক্ষাসমূহ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন কারাগারে যেতে না হয় সে বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
তিনি এ বিষয়ে বৃহস্পতিবারও বলেছেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন কিন্তু প্রসিকিউশন টিম আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই যারা সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, যারা এইচএসসি পরীক্ষার্থী, যারা মাইনর তাদের জামিন দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার জন্য প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
শুক্রবার ঢাকায় জামিন পাওয়া আসামিদের মধ্যে মিরপুর মডেল থানার মামলার ছয়জন, শাহবাগ থানার পাঁচজন, উত্তরা পশ্চিম থানার পাঁচজন, পল্লবী ও যাত্রাবাড়ী থানার তিনজন রয়েছেন। এছাড়াও সাভার, আশুলিয়া, রূপনগর, ওয়ারী, লালবাগ, উত্তরা-পূর্ব, তুরাগ ও সবুজবাগ থানার দুজন রয়েছেন। তাছাড়া চকবাজার, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ধানমণ্ডি ও কদমতলী থানার একজন করে রয়েছেন।
জামিন পাওয়া আসামিরা হলেন, মো. আলী হোসেন, মো. ইসমাইল তালুকদার, ইমরান হোসেন, মো. আব্দুল কাদের, মো. নাফিজ, ইয়ামিন শেখ, আসিফ খান, আব্দুস সামাদ, এলাহি বখস, সামির হোসেন, তানজিল হাসান, আলাউদ্দিন, অপু, মো. ফয়সাল আহম্মেদ, সামিউল আলম, শাখাওয়াত হোসেন, রনি শেখ, ইমরান আহম্মেদ আফলার, মো. সম্রাট খলিফা, রাশিদুল ইসলাম তোহা, মো. মাসুদ পারভেজ, মো. আসিফ, মো. আল আমিন, মো. শাকিল আহম্মেদ, মো. জাবের হোসেন, রায়হান, রুহুল আমিন, রাহাত ওবাইদুল্লাহ, জাকি তাহসিন, তুহিন, মো. নাহিদ আহম্মেদ, মাসুদ রানা, মো. শরিফুল ইসলাম, শিহাব হোসেন, তাসরিফ স্বপ্ন, ছোয়াদ উর রহমান, নাসির হোসেন, সাব্বির হোসেন, ফারদিন ইসলাম, খালিদ হাসান, ইমন হাওলাদার, হেলাল।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাতে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় আটক হওয়াদের মধ্যে যদি কেউ চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী থাকে, তারা পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রসহ জামিন আবেদন করলে তাদের জামিনে মুক্তিতে সরকার আইনি সহায়তা দেবে বলে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় আটককৃতের মধ্যে যদি কেউ চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী থাকে, তারা পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রাদিসহ জামিন আবেদন করলে তাদের জামিনে মুক্তিতে সরকার আইনি সহায়তা দেবে। আটককৃত যেসব ছাত্রদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ নেই তাদের জামিনের ক্ষেত্রেও সরকার আইনি সহায়তা দেবে।
জেএ/জেএইচ/এমকেআর/এমএস