বিনোদন

জয়া আহসান নাকি ‘বিটিভি-ফার্মগেটের মাঝখানে’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এরই মধ্যে পথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিনোদন অঙ্গনের শিল্পীরা। হত্যাকান্ড ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। এ রকম সময়েও ঘরে অবস্থান করছেন জয়া। ফেসবুকে ‘বিমূর্ত’ এক স্ট্যাটাস দিয়ে নিন্দার ঝড়ে পড়েছেন দুই বাংলায় পরিচিতি পাওয়া এই অভিনেত্রী। এক মন্তব্যকারী লিখেই বসেছেন, ‘আপনি বিটিভি আর ফার্মগেটের মাঝখানে, মহাখালীতে আছেন এই লেখাটা দিয়ে।’

Advertisement

পয়লা আগস্ট রাত সাড়ে ১২টায় ফেসবুকে জয়া লিখেছেন, ‘নৈরাশ্য আমাকে শূন্যতার দিকহীন সুরঙ্গে ছুঁড়ে দিয়েছে। এত মৃত্যু এত কান্না আমার মুক্তিযোদ্ধা পিতার রক্ত-ঘামের বাংলাদেশে বইবে কেমন করে। যে জীবন গেছে, তা আর ফিরে আসবে না। যে ক্ষত আমাদের মনে সৃষ্টি হলো, তা অমোচনীয়। কেমন করে পথ চলবো আমরা। অবিশ্বাস অনাস্থা ঘৃণার আবহে পথ হারিয়ে ফেলবো কি আমরা! দিশাহীন আমি, বোধহীন আমি হতাশায় নিমজ্জিত আমি নিশ্চুপ সপ্তাহধিকাল! কী লিখবো? কী বলবো? কে শুনবে আমার কথা? এ কেমন ধূসর যাত্রায় রক্তাক্ত আমরা একাকী পথ হাঁটছি? কী এক অমানিশা আমাদের জীবনে নেমে এলো? কেমন করে পথ চলবো আমরা? কেমন করে?’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রাণগুলো চলে গেছে, বিষণ্ণতা রেখে গেছে, এই এত এত তাজা প্রাণের দাম তো অনেক, আমরা যে অনেক বেশি ঋণী হয়ে বেঁচে রইলাম! হে ঈশ্বর, আলো দাও, সকলের হৃদয়ে। সকল ঘৃণা ক্রোধ ধূয়েমুছে যাক আলোর বন্যায়, ভালোবাসায়া। হত্যা, মৃত্যু, হানাহানি অতিক্রম করে একে অপরের হাত ধরে ভালোবাসায়, কান্নায় যুথবদ্ধ পথ চলি, দেশটা ফিরে পাই আমারা আমাদের মতো করে। শান্তি চাই, শান্তি চাই, শান্তি চাই।’

আরও পড়ুন:

Advertisement

কলকাতার নতুন সিনেমায় জয়া আহসান জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হলেন জয়া আহসান

জয়ার ওই পোস্টে শতাধিক মন্তব্যকারীর প্রায় সবাই তার পোস্টের নিন্দা জানিয়েছেন। নবীন ঢালিউড অভিনেত্রী হুমায়রা সুবাহ লিখেছেন, ‘প্রিয় জয়া আপা, আপনি ঘুমান। এসব নিয়ে আপনার চিন্তা করার দরকার নেই। বরং আপনি আপনার কুকুরগুলো নিয়ে ভাবুন। আপনার কাছে মানুষের থেকে কুকুর প্রিয়। আবার এইসব বলতে গেলে নেতানেত্রী, আমলা-কামলারা আপনাকে ভুল বুঝবে, আর ভবিষ্যতে আপনারা বাংলাদেশেও থাকবেন না, ইন্ডিয়া বা আমেরিকাতেই সেটেল হবেন। আমরা গরীব মানুষ, বাংলাদেশেই থাকবো। তাই বাংলাদেশের জন্য লড়ছি। হয়তো আজ, হোক কাল এই দেশেই মরে যাবো। ভালো থাকুন প্রিয় জয়া আপা।’

সাব্বির নামের একটি আইডি থেকে লেখা হয়েছে, ‘আপনি মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে হয়ে ‘শান্তি, শান্তি চাই’ এমনটা মানায় না। মুক্তিযোদ্ধারা সত্য, ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থায় থেকে যুদ্ধ করেছিলেন। তখন শান্তি কমিটির কাপুরুষেরা ‘শান্তি চাই শান্তি চাই’ বলতো।’ ইস্পতা জাহান লিখেছেন, ‘বাহবা... কি কবিতা রে!’ সাজিদ হাসান খান লিখেছেন, ‘সারহীন শব্দের সালাদ। আপনার কাছে আমাদের কোনো প্রত্যাশা নেই।’ সায়মা সুলতানা, শুধুই কি শান্তি চান? হত্যাকান্ডের বিচার চান না?’ সুমাইয়া বিনতে নার্গিস লিখেছেন, ‘পোস্টটা সুন্দর হয়েছে। এখন আবার গর্তে ঢুকে পড়ুন।’ তপু শরিফ লিখেছেন, ‘দুকূল রক্ষা করে ডিপ্লোমেটিক অবস্থান। দিনশেষে আপনি অভিনেত্রীই। শিল্পীও না। আর কিছু না। ওহ সরি, মুক্তিযোদ্ধার কন্যাও বটে।’ শামীম ইয়াসমিন লিখেছেন, ‘কুকুরের জন্য এত মায়াকান্না দেখান অথচ দেশে কত মানুষের লাশ পড়ল এর জন্য একটা বাক্য পর্যন্ত বলতে পারলেন না।’

অনেকে অভিনেত্রীকে নিজের অবস্থান পরিস্কার করার পরামর্শও দিয়েছেন। কেউ কেউ তাকে পথে নেমে প্রতিবাদ করারও পরামর্শ দিয়েছেন। ফারজানা খানম সামিয়া লিখেছেন, ‘আপনি বিটিভি আর ফার্মগেটের মাঝখানে, মহাখালীতে আছেন এই লেখাটা দিয়ে। আপনার মতো প্রাণ-সচেতন মানুষের আরো আগেই ঈশ্বরের কাছে শান্তি চাওয়া দরকার ছিল, শত শত প্রাণ ঝরে যাওয়ার পরে না। এখন যেহেতু দেরি করে হলেও হাত তুলেছেন সেহেতু রাস্তায় নামেন। আপনাকে ঠেকাবে না কেউ, আর আপনি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ালেই বোঝা যাবে আপনি রামপুরাতে নাকি ফার্মগেটে।’ মুহাম্মাদ রাকিবুল হাসান লিখেছেন, ‘এটা দুঃখ-বিলাসের সময় না, আপা। শান্তি চান; স্বাধীন দেশের এই গণহত্যার বিচার চান না? ওরা ন্যায় বিচার না পেলে শান্তিতে থাকতে পারবেন? বিবেক কিন্তু ক্ষমা করবে না। আওয়াজ তুলুন...।’

সর্বশেষ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ‘ডিয়ার মা’ নামে একটি সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন জয়া আহসান। ছবিটির পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। এর আগে একই নির্মাতার হাত ধরে হিন্দি সিনেমায় অভিষেক হয় জয়ার। পঙ্কজ ত্রিপাঠির বিপরীতে ছবিটির নাম ‘কড়ক সিং’। বাংলাদেশে জয়ার সর্বশেষ ছবি ‘পেয়ারার সুবাস’।

Advertisement

আরএমডি/এএসএম