মুসলমানদের একটি আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য সত্যবাদিতা; সত্য বলা, সত্য সাক্ষ্য দেওয়া, সত্য প্রতিষ্ঠা করা, সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে থাকা। ধোঁকা, প্রতারণা, ভাণ ও ভণ্ডামি থেকে দূরে থাকা। কোরআনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের গুণাবলি উল্লেখ করে বলেন,
Advertisement
اِنَّ الۡمُسۡلِمِیۡنَ وَ الۡمُسۡلِمٰتِ وَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ وَ الۡقٰنِتِیۡنَ وَ الۡقٰنِتٰتِ وَ الصّٰدِقِیۡنَ وَ الصّٰدِقٰتِ وَ الصّٰبِرِیۡنَ وَ الصّٰبِرٰتِ وَ الۡخٰشِعِیۡنَ وَ الۡخٰشِعٰتِ وَ الۡمُتَصَدِّقِیۡنَ وَ الۡمُتَصَدِّقٰتِ وَ الصَّآئِمِیۡنَ وَ الصّٰٓئِمٰتِ وَ الۡحٰفِظِیۡنَ فُرُوۡجَهُمۡ وَ الۡحٰفِظٰتِ وَ الذّٰكِرِیۡنَ اللّٰهَ كَثِیۡرًا وَّ الذّٰكِرٰتِ ۙ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا
নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন। (সুরা আহজাব: ৩৫)
মুমিনদের সত্যের সাথে থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
Advertisement
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ كُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ
হে মুমিনগণ,তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সুরা তাওবা: ১১৯)
মিথ্যা, ধোঁকা ও প্রতারণা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। মুনাফিকরা নিজেদের বিশ্বাসের ব্যাপারে যেমন অসত্য কথা বলে, প্রতারণা করে, অন্যান্য ক্ষেত্রেও মিথ্যাই তাদের স্বভাব। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি: কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা খেলাপ করে এবং আমানত রাখা হলে তাতে খেয়ানত করে। (সহিহ বুখারি: ৩৩)
যারা মিথ্যা বলে, ধোঁকা ও প্রতারণা করে, তারা সফলতা ও হেদায়াত থেকে বঞ্চিত থাকে। আল্লাহ মিথ্যুকদের পছন্দ করেন না, তাদের সঠিক পথ দেখান না, সফলতা দেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
Advertisement
اِنَّ اللّٰهَ لَا یَهۡدِیۡ مَنۡ هُوَ مُسۡرِفٌ كَذَّابٌ
যে সীমালঙ্ঘন করে আর মিথ্যে বলে আল্লাহ তাকে সঠিক পথ দেখান না। (সুরা গাফির: ২৮)
মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার শাস্তি
উম্মে সালামা (রা.) বলেন, একদিন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর থেকে বের হয়ে দেখলেন একদল লোক উঁচু গলায় তাদের মধ্যকার একটা সমস্যা নিয়ে বিবাদ করছে। রাসুল (সা.) বললেন, আপনারা আমার কাছে ঝগড়া বিবাদ সমাধানের উদ্দেশ্যে আসেন। আমিও একজন মানুষ। আপনাদের অনেকে অন্যের তুলনায় নিজের যুক্তি-প্রমাণ পেশ করায় বেশি পারঙ্গম। আমি তার কথা শুনে প্রভাবিত হয়ে তার অনুকূলে ফয়সালা করে ফেলতে পারি। বিচারের ফয়সালায় কাউকে তার ভাইয়ের প্রাপ্য কোনো অংশ দিয়ে দেওয়া হলে সে যেন তা গ্রহণ না করে। সেটা একটা আগুনের টুকরা ছাড়া কিছুই না। (সহিহ মুসলিম)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তির সুপারিশ আল্লাহ তাআলার কোনো দণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, সে যেন আল্লাহ তাআলার সাথে দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হলো। যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কোনো অন্যায় বা অপকর্মের পক্ষে বিবাদ করে, সে ওই কাজ থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার ওপর ক্রুদ্ধ ও অসন্তুষ্ট থাকেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে এমন কোনো দোষে অভিযুক্ত করে যা তার মধ্যে নেই, সে যদি তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিজেকে মুক্ত ও পবিত্র না করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামীদের দূষিত রক্ত ও পুঁজের মধ্যে নিয়ে ফেলবেন। (সুনানে আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)
ওএফএফ/জিকেএস