গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে বের হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে নিজেদের ফেসবুক আইডিতে পোস্টে এ ঘোষণা দেন তারা। তবে ফেসবুকে এই ঘোষণা দেওয়ার পর তাদের ফেসবুক আইডি আর পাওয়া যাচ্ছে না। ফেসবুকে তাদের নাম লিখে খোঁজাখুঁজি করেও তাদের আইডি পাওয়া যায়নি।
Advertisement
ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, ‘এই আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই মুক্ত নই। এই গণগ্রেফতার গণঘৃণার নামান্তর। আমাদের মুক্তি তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন এই আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া শেষ ব্যক্তিটিও মুক্তি পাবেন। এই গণগ্রেফতার কেবল নিরপরাধ মানুষের অধিকার হরণ নয়, বরং আমাদের সমগ্র সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন। এটি মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের প্রতি এক ভয়ানক আঘাত।’
তিনি লেখেন,‘আমাদের এই আন্দোলন শুধু ব্যক্তির মুক্তির জন্য নয়; বরং বৈষম্য, নিপীড়ন, গণগ্রেফতার এবং ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
সারজিস আলম তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেফতার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আপনারা কথা রাখেননি। আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন। সারাদেশে আমার স্কুল-কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিচার্জ করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন! মাশরুর তার উদাহরণ।’
Advertisement
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে এই সমন্বয়ক লেখেন, ‘যারা একটিবারের জন্যও এই আন্দোলনে এসেছে তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, গ্রেফতারের ভয়ে থাকে। এমন অনেকে আছে যাদের পরিবার এখনও তাদের খুঁজে পায়নি। এমনতো হওয়া উচিত ছিল না!’
সারজিস লেখেন, ‘কোথায় মহাখালীর সেতু ভবন আর কোথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়! অথচ আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মহাখালীর সেতু ভবনে হামলার জন্য গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেন। সঙ্গে আছে আসিফ মাহতাব স্যার, মাশরুরসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য শিক্ষার্থী।’
নির্বিচার গ্রেফতার-নির্যাতন করে আন্দোলন দমানো যাবে কি না, প্রশ্ন রেখে তিনি লেখেন, ‘রিকশা থেকে নামিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন। কী ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?’
সরকারকে তরুণ প্রজন্মের অদম্য শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সারজিস লেখেন, ‘ছয়দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ছয়জনকে আটকে রাখা যায়, কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে আটকে রাখবেন?’
Advertisement
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ সমন্বয়ক বলেন, ‘পরিশেষে এটুকু বলতে চাই এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যে কোনো কিছু মোকাবিলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে, ততদিন এ লড়াই চলবে।’
এনএস/এমআইএইচএস/এএসএম