শ্রাবণের মাঝ সময়ে কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ চলছে। গত কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার অন্যতম নদী মাতামুহুরি, ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী, বাকঁখালী ও রেজুখালের পানি বেড়েছে। বাঁধ উপচে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি। অনেক জায়গায় বাঁধ ডিঙ্গিয়ে খাল-নদীর পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে।
Advertisement
পাশাপাশি নিষ্কাশনে বাঁধা পেয়ে বৃষ্টি ও পাহাড় বেয়ে নামা পানিতে প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলার দুইশতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে বাসাবাড়ি, নলকূপ, সড়ক ও চলাচলের পথ। রামুতে ঢলের পানির তোড়ে ভাঙন ধরেছে নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া সড়কের বেইলি ব্রিজ এলাকায়। নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্পের পাশের এ সড়কটি রক্ষায় মাটি ভরে বস্তা ফেলা হচ্ছে।
এছাড়া কক্সবাজার সদর, রামু, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি পানিবন্দি উপজেলা উখিয়া। কক্সবাজার-টেকনাফ-উখিয়া হাইওয়ের অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। পাহাড় ধসের শঙ্কায় আতঙ্কিত এসব এলাকার বাসিন্দারা।
অপরদিকে প্লাবিত এলাকায় বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। অনেক বাড়িতে দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তোভোগীরা।
Advertisement
উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে বুধবার সন্ধ্যা থেকে তিন ইউনিয়নের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকার রাস্তা-ঘাট, খাল-বিল তলিয়ে পানি ঢুকেছে বাসাবাড়িতে। চুলা ও রান্নার সামগ্রী ডুবে থাকায় বন্ধ রয়েছে রান্না। ফলে, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গতদের তাৎক্ষনিক সহায়তায় কোনো ব্যবস্থা প্রশাসনের ছিল না, এটা দুঃখজনক। সরকারি সহায়তা নগণ্য। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে।
কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন কবির বলেন, সোমবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থেমে থেমে টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রধান সড়ক, হোটেল-মোটেল জোনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে।
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসআই আকতার কামাল বলেন, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাক পাড়া, নাজিরারটেকসহ একাধিক গ্রাম তলিয়ে গেছে পানিতে।
ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, বাঁকখালী নদীতে ঢল নামায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে ইউনিয়নের ২০-২৫টি গ্রাম তলিয়ে রয়েছে। শহরের গোলদিঘীরপাড়, বৌদ্ধ মন্দির এলাকা, চাউলবাজার, টেকপাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকাসহ প্লাবিত হয়েছে শহরের বিভিন্ন সড়ক ও উপ-সড়ক। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে আসবাবপত্র, দোকানের মালামাল নষ্ট হয়েছে।
Advertisement
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, নালার পথ দখল হওয়ায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যায় রূপ নিয়েছে। এটা নির্মূলে ইতোমধ্যে অবৈধ দখল ও নির্মিত স্থাপনা গুড়িয়ে পানি চলাচল সচলের কাজ শুরু করেছি।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরীর একাধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধে ভাঙন ধরেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, গত কয়েকদিনে কক্সবাজারে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। আরও কয়েকদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, টানা বর্ষণে নদী ও খালে ঢল নেমেছে। অনেক উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে প্লাবন। এরমধ্যে উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং, জালিয়াপালং, পালংখালী ইউনিয়নে পানিবন্দি ঘরবাড়ি ও মানুষের সংখ্যা বেশি। এ তিন ইউনিয়নের জন্য উখিয়া উপজেলায় ছয় টন চাল ও নগদ দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কুতুবদিয়া উপজেলায় তিন টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সায়ীদ আলমগীর/জেডএইচ/এএসএম