জাতীয়

সবার অজান্তেই ধীরে ধীরে ধর্মান্ধ শ্রেণি গড়ে উঠেছে: প্রধানমন্ত্রী

সবার অজান্তেই ধীরে ধীরে একটা ধর্মান্ধ শ্রেণি গড়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর খামারবাড়িতে কেআইবি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগের নেওয়া নানান উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে উঠবে এবং যে জাতি হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নত জাতি। আমরা যখন সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি, পাশাপাশি আমরা কী দেখলাম? ওই পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, ওগুলো এখনো ছাড়েনি। সেখানে ধর্মান্ধতা এবং কূপমন্ডুকতা দিয়ে একটা শ্রেণি কিন্তু ধীরে ধীরে সবার অজান্তেই গড়ে উঠেছে। যারা ওই যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ছিল। দেশে গণহত্যা, লুটপাট, নারী ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ এসব কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সঙ্গে দোসর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছে।’

তিনি বলেন, ‘আর সে আঘাতটা আপনারা দেখলেন কিছুদিন আগে। কোটা আন্দোলনের নামে যখন সব রাস্তায় বেরিয়ে এলো, আমরা তাদের বললাম, কোটা আন্দোলন হয়েছিল ২০১৮ সালে। আমরা এটা মেনে নিয়ে বাতিল করে দিয়েছিলাম কোটা পদ্ধতি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মামলা করলো, সেখানে আমার করা প্রজ্ঞাপনটা বাতিল করে দিলেন হাইকোর্ট। আবার কোটা ফিরে আসলো। সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাপিলেট ডিভিশনে আপিল করা হলো। আপিল করা হলে হাইকোর্টের রায়টা সাসপেন্ড করে দেওয়া হলো। কাজেই আবার সেখানে কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়ে গেলো এবং পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখও দেওয়া হলো। ৫ জুন এ রায় হয়েছিল। পুরো জুন মাস চলে গেলো। জুলাই মাসের ৭ তারিখ থেকে হঠাৎ দেখি, আবার কোটার জন্য আন্দোলন- যখন কোটা পদ্ধতি নাই।’

Advertisement

আরও পড়ুন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ, গেজেট জারি  জামায়াত-শিবিরকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে মোকাবিলা করতে হবে: শেখ হাসিনা 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তখন কোটা পদ্ধতি নাই কিন্তু তখনই আন্দোলন। আর আন্দোলন না, দেখা গেল ঝাঁকে ঝাঁকে সব জড়ো হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক থেকে শুরু করে, গার্ডিয়ান থেকে শুরু করে অনেক শিশুদের নিয়েও হাজির হচ্ছে। আমার খুব সন্দেহ হলো, এর পেছনে অন্য কিছু আছে। আমি সেটা বলেও ছিলাম। তাহলে এই ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ কী হবে! যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা, এমনকি তারা মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল সে ব্যবস্থাও করা- সবই করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো কিছুই মানবে না। হাইকোর্টের (শুনানির) তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসা হলো। অ্যাপিলেট ডিভিশনের চেম্বার জজ থেকে রায় দেওয়া হলো, ঠিক যা চেয়েছিল তার থেকে বেশি। তাদের একদফা দাবি ছিল কোটা সংস্কার। যে দাবি করেছিল, সেই দাবি সংস্কার করে দেওয়া হলো। কিন্তু সেই সংস্কার করে দেওয়ার পরও তাদের আন্দোলন থামে না, দাবি থামে না।’

জামায়াত-শিবিরকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে মোকাবিলা করতে হবে

নিষিদ্ধের পর জামায়াত-শিবিরকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, ওরা তো জঙ্গিবাদী হিসেবে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে আবার ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। সে কারণে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে এদের মোকাবিলা করা ও মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা সবাই মিলে করতে হবে। কারণ, বাংলার মাটিতে জঙ্গির ঠাঁই হবে না। সেভাবে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমি দেশবাসীকে সজাগ থাকতে আহ্বান জানাই এবং তাদের সহযোগিতা চাই। আমি জানি বার বার আঘাত আসবে, আমি পরোয়া করি না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, একদিন নিয়েও যাবেন। কিন্তু যেখানে মানুষের জন্য কল্যাণের কাজ, সে কল্যাণের কাজ আমরা করেই যাবো।’

তিনি বলেন, ‘১ আগস্ট রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যম আমরা শোকের মাস শুরু করেছি। সব সংগঠনের নেতাদের এই শোকের মাসে শুধু শোক পালন নয়, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জাতির পিতার আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতির পিতা তো এ জাতির জন্য কাজ করে গেছেন। কাফনের কাপড় ছাড়া কিছুই নিয়ে যাননি। শুধু দিয়েই গেছেন। তার সে আদর্শ আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষকলীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক উম্মুল কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী প্রমুখ।

Advertisement

অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক সময়ে নিহতদের স্মরণে ও ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

এসইউজে/কেএসআর/জিকেএস