ভ্রমণ

সূর্যাস্ত উপভোগে মুহুরী প্রজেক্টে কীভাবে পৌঁছাবেন?

পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দুয়ার নিয়ে বসে আছে মুহুরী প্রজেক্ট। সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে সেখানে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প হলো মুহুরী প্রজেক্ট। দেশের প্রথম বায়ু-বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখানেই অবস্থিত।

Advertisement

বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান ও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে স্থানটি। সেখানকার সৌন্দর্য দেখতে পুরো বছরই দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। বিশেষ করে ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় হয়।

বৃহত্তর চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলা সীমান্তে অবস্থিত মুহুরী প্রকল্প দেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। কৃষি উৎপাদনের বৃদ্ধিতে এর অবদান বিশাল, পাশাপাশি মুহুরী সেচ প্রকল্প একটি অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ ও এর পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক অনাবিল নৈসর্গিক শোভা যে কোনো পর্যটককে আকর্ষিত করতে পারে।

মুহুরী প্রজেক্টে কী কী দেখবেন?

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মুহুরী রেগুলেটরের চারদিকে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি, বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কলকাকলি, বাঁধের দু’পাশে নিচ থেকে পাথর দিয়ে বাঁধানো ও ওপরদিকে দূর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা। মুহুরীর জলরাশিতে নৌ ভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস ও প্রায় বিভিন্ন জাতের শত শত পাখির দেখা মেলে।

Advertisement

এছাড়া মুগ্ধ হবেন নদীর পারের সবুজ বনানী ঘেরা মায়াবী পরিবেশ দেখে। শীতকালে অতিথি পাখির আগমন ও তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এই এলাকা। গরমে একেকটু স্বস্তির বাতাসের জন্যও মানুষ এখানে ছুটে আসেন। সেচ প্রকল্প এলাকার চারপাশে সবুজের সমারোহ।

এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদার করতে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। মুহুরী নদীতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাসমান মাছ চাষ, নদীতে জাল ফেলে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, দেশের প্রথম বায়ু-বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ, ডেইরি ফার্ম, ব্যক্তিগত পর্যায়ে নার্সারি, অ্যাগ্রো খামার ইত্যাদি দেখে আপনার চোখ জুড়াবে।

মুহুরী প্রজেক্ট পরিচিতি

একসময় মুহুরী প্রকল্পের স্থানে ছিল প্রায় ২ মাইল প্রশস্থ নদী। এপার-ওপার ছিল বিচ্ছিন্ন। ফেনী নদী ও মুহুরী নদীর দুই তীরকে সেচ সুবিধার আওতায় এনে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার সীমান্ত বরাবর বয়ে যাওয়া ফেনী নদী ও মুহুরী নদীর মোহনার কিছুটা ভাটিতে নির্মিত মুহুরী সেচ প্রকল্প।

আরও পড়ুন সিকিম ভ্রমণে ঘুরতে ভুলবেন না যে ৯ স্থানে  মালয়েশিয়ার ল্যাংকাউই ট্যুরে কী কী দেখবেন? 

প্রকল্পের সার্বিক তত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড। মুহুরী প্রকল্পের অধীনে আছে ফেনী সদর, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম থানার আংশিক ও মিরসরাই থানার উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকা। প্রকল্পাধীন এলাকার আয়তন ৪০ হাজার হেক্টর।

Advertisement

মুহুরী প্রকল্পে নির্মাণ কাজ ১৯৭৭-৭৮ সালে শুরু হলেও এর প্রাথমিক কাজ শেষ হতে সময় লাগে ৩ বছর। আর সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে ১৯৮৫-৮৬ সাল পার হয়ে যায়। প্রকল্পের প্রধান অংশসমূহ হচ্ছে ইমারত ৭ হাজার ৬৪৬ বর্গমিটার, ক্লোজার ড্যাম ১ টি ৩ হাজার ৪১১ কিলোমিটার। রেগুলেটর একটি ৪০ দরজা বিশিষ্ট নিষ্কাশন কাঠামো নতুন একটি ও পূর্ণ সংস্কার ৬টি।

কীভাবে পৌঁছাবেন মুহুরী প্রজেক্টে?

দেশের যে কোনো স্থান থেকে মুহুরী প্রজেক্টের সড়ক যোগাযোগ তথা যাতায়াত ব্যবস্থা যথেষ্ট সুবিধাজনক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি পশ্চিম দিকে চলে গেছে। সেটিই সহজতর ও একমাত্র রাস্তা। জোরারগঞ্জ হতে প্রজেক্ট পর্যন্ত মাত্র আধা কিলোমিটার রাস্তাতেই পাবেন সিএনজি বা অটোরিকশা সার্ভিস।

ভাড়া টেক্সি বা ব্যক্তিগত গাড়িতেই ভ্রমণে সুবিধাজনক হয়। একাকি কিংবা দলবদ্ধভাবে মুহুরী প্রজেক্টে ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন। জোরারগঞ্জ হতে প্রজেক্ট রোডে আট কিলোমিটার চলার পর প্রকল্পের দীর্ঘ ড্যামের (বাঁধের) পূর্ব প্রান্তে পৌঁছানো যাবে। এখানে পর্যটকদের জন্যে উন্নত কোনো হোটেল রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা নেই।

ফাঁকে ফাঁকে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি রেস্টুরেন্ট তাই নিজ দায়িত্বেই খাবারের আয়োজনের জন্যে রেগুলেটরের উত্তর পশ্চিমের ছোট বনে রান্না বান্না ও ভোজের আয়োজন করা যেতে পারে। দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে ২/১ টি অস্থায়ী ভাসমান চা দোকান বসে। তবে সেখানে রাত্রিযাপনের কোনো সুব্যবস্থা নেই।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়নে মুহুরী প্রজেক্ট একটি আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। যা থেকে কর্পোরেশন প্রতিবছর পর্যটন খাতে আয় করতে পারে দেশি-বিদেশি বৈদেশিক মুদ্রা।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বা ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের সদিচ্ছার অভাবে কাঙ্খিত পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠেনি এটি। এছাড়া থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থার অভাবে নিরাশ হতে হয় অনেক পর্যটককে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আধুনিক একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠলে কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

এমএমডি/জেএমএস/জিকেএস