ধর্ম

যে কৃপণতার নিন্দা করা হয়েছে কোরআনে

মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থ্য অনুযায়ী তার ওপর কিছু অর্থনৈতিক দায়িত্ব আসে। এর মধ্যে কিছু আবশ্যিক দায়িত্ব, কিছু ঐচ্ছিক দায়িত্ব। নিজের স্ত্রী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা, তাদের জরুরি প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করা, বাবা-মা অসহায় ও সম্পদহীন হলে তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি ফরজ বা আবশ্যিক দায়িত্ব, সামর্থ্যবান হলে নিজের সম্পদের জাকাত দেওয়া ফরজ বা আবশ্যিক দায়িত্ব।

Advertisement

এ ছাড়া নিজের অন্যান্য অভাবী আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, সহকর্মীদের সাধ্য মতো খোঁজ খবর রাখা, সামাজিক কল্যাণকর কাজে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি ঐচ্ছিক দায়িত্ব, বিশেষ পেক্ষাপটে আবশ্যিক দায়িত্বও হয়ে উঠতে পারে।

কেউ যদি নিজের ফরজ-ওয়াজিব বা আবশ্যিক কর্তব্যগুলো পালন না করে বা এ ক্ষেত্রে গড়িমসি ও অবহেলা করে, সামর্থ্য অনুযায়ী সদকা না করে, কল্যাণমূলক কাজকর্মের ব্যয়ে অংশগ্রহণ না করে, শরিয়তের দৃষ্টিতে সে কৃপণ বিবেচিত হয়। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ও হাদিসে কৃপণতাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও মন্দ বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا

Advertisement

তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর, তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না আর উত্তম আচরণ কর বাবা-মায়ের সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, এতিম, মিসকিন, আত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়- প্রতিবেশী, সঙ্গী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী। যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়; আর গোপন করে তা, যা আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে দান করেছেন। আমি প্রস্তুত করে রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাকর আজাব। (সুরা নিসা: ৩৬, ৩৭)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَ لَا یَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ یَبۡخَلُوۡنَ بِمَاۤ اٰتٰهُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ هُوَ خَیۡرًا لَّهُمۡ بَلۡ هُوَ شَرٌّ لَّهُمۡ سَیُطَوَّقُوۡنَ مَا بَخِلُوۡا بِهٖ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ لِلّٰهِ مِیۡرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদেরকে দিয়েছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন মনে না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর, তারা যাতে কৃপণতা করেছে, কেয়ামতের দিন তারই বেড়ি তাদের গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। আসমান ও জমিনের ক্ষমতা কেবল আল্লাহরই। তোমরা যা কিছুই করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত। (সুরা আলে ইমরান: ১৮০)

Advertisement

অপচয় থেকেও বাঁচতে হবে

কৃপণতা থেকে যেমন বাঁচতে হবে, অতিব্যায়ও হওয়া যাবে না। অপচয় করা যাবে না। মধ্যপন্থা অলম্বন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَنۡفَقُوۡا لَمۡ یُسۡرِفُوۡا وَ لَمۡ یَقۡتُرُوۡا وَ كَانَ بَیۡنَ ذٰلِكَ قَوَامًا

তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। (সুরা ফুরকান: ৬৭) আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ لَا تَجۡعَلۡ یَدَكَ مَغۡلُوۡلَۃً اِلٰی عُنُقِكَ وَ لَا تَبۡسُطۡهَا كُلَّ الۡبَسۡطِ فَتَقۡعُدَ مَلُوۡمًا مَّحۡسُوۡرًاআর তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ রেখো না এবং তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে। (সুরা ইসরা: ২৯)

কৃপণতার উৎস দুনিয়াপ্রীতি ও লোভ

কৃপণতা সৃষ্টি হয় অন্তরের সংকীর্ণতা ও দুনিয়ার সম্পদের লোভ থেকে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

إياكم والشح فانما هلك من كان قبلكم بالشح أمرهم بالقطيعة فقطعوا وأمرهم بالبخل فبخلوا وأمرهم بالفجور ففجروا

তোমরা দুনিয়ার সম্পদের লোভ থেকে বেঁচে থাক। লোভের কারণে তোমাদের আগে অনেকে ধ্বংস হয়েছে। লোভ তাদের প্ররোচিত করেছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে, কৃপণতা করতে, পাপাচারে লিপ্ত হতে, তারা তাই করেছে। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১/৪১৫)

ওএফএফ/জেআইএম