প্রবাস

নতুন একাত্তর এবং আমরা

৭১ দেখিনি বলে মনের মধ্যে একটা আক্ষেপ ছিল। জুলাই মাসের শুরু থেকে দেশের ছাত্র আন্দোলন দেখে সেই আক্ষেপটা মিটে গেলো। সেইসঙ্গে আমরা নতুন করে সাক্ষী হলাম একাত্তরের ভয়াবহতার। প্রত্যক্ষ করলাম দেশের নিরীহ ছাত্রদের ওপর সরকারি পেটোয়া বাহিনীর অত্যাচার। দেখলাম সরকারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্মমতা।

Advertisement

এছাড়াও দেখলাম দেশের সাধারণ মানুষ কীভাবে এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানালো। দেশের বিবেক শিক্ষকেরা কীভাবে এই আন্দোলনে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করলো। প্রবাসীরা কীভাবে দেশের আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করলো। প্রবাসী দ্বিতীয় প্রজন্ম যাদের জন্ম বিদেশের মাটিতে তারাও একটা সময় এই আন্দোলনের জোরালো কণ্ঠস্বর হয়ে গেলো।

পাশাপাশি এক শ্রেণির মানুষ নিজেদের আখের গোছাতে শুরু করলো। তারা তো এতদিন চাটুকার ছিলই গত কদিনে তারা মোসাহেবির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। তারা টিনের চশমা চোখে দিয়ে দেশে কোনো আন্দোলন দেখতে পেলো না। আর দেখতে পেলেও সেটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই জাহির করতে লাগলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের তারা একটা অলীক ব্যাখ্যা দিতে লাগলো। কিন্তু এই প্রবীণ এবং অচল প্রজন্ম জানে না যে জেনারেশন জি অনেক বেশি আধুনিক।

তাদের শুধু শক্তি প্রয়োগ করে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। বাস্তবেও সেটাই হয়েছে। দেশে একটা গণহত্যা হয়ে যাবার পর তারা আবার নতুন মনোবলে বলীয়ান হয়ে আন্দোলনে ফিরে এসেছে। তারা তাদের ভাইবোনের রক্তের হিসাব বুঝে নিতে চায়। তারা জানতে চায় কি অপরাধে একটা স্বাধীন দেশে এত রক্তপাত হলো।

Advertisement

আন্দোলনের একেবারে শুরুর দিকে নজর দেওয়া যাক। জুলাইয়ের এক তারিখ থেকে ছাত্ররা প্রতিবাদ করতে শুরু করে। কি বিষয়ে আন্দোলন সেটা এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার তাই সেই বিষয়ে কথা বলছি না। আর আমি ছাত্র বলতে এই লেখায় ছাত্রছাত্রী উভয়কেই বুঝিয়েছি। এই আন্দোলনকে দেশের সরকার মোটেও আমলে নেয়নি। তাদের ব্যাপারটা এমন রাজপথে আন্দোলন করে যেই দলের জন্ম সেই দলকে আন্দোলন শেখাতে এসো না।

ছিয়াত্তর বছর বয়সী দলের কাছে তোমরা নিতান্তই শিশু যাদের এখনো দুধের দাঁত পড়েনি। এতো গেলো অবজ্ঞা করার ব্যাপার। উপরন্তু অতি আত্মবিশ্বাসী দলপতি এবং সরকার প্রধান তার চিরচেনা সুরে আন্দোলনকারীদের নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা শুরু করলেন। এটা একজন সাধারণ নেতা বা একজন সাধারণ মানুষ করলে সেটা হয়তোবা শোভন হতো কিন্তু একজন সরকার প্রধানের এমন অভিব্যক্তি আন্দোলনে যেন ঘি ঢেলে দিলো। এরপর থেকে সেই আগুন জ্বলছে।

আমি এখানে তারিখগুলোর উল্লেখ করছি না শুধু ঘটপট প্রবাহের দিকে নজর রাখছি। সরকার প্রধানের এমন চটুল যুক্তিতে আন্দোলনকারীরা নিজেদের রাজাকার অভিদা দিতেও পিছপা হয়নি। যে দেশে রাজাকার, আলবদর, আলশামস ছিল সবচেয়ে ঘৃণিত শব্দ সেই শব্দই ছাত্ররা উচ্চারণ করলো। তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে ছাত্ররা কি সত্যিই নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে গর্বিত হলো। বিষয়টা মোটেও এমন সরল সহজ না। যদিও এই একটা স্লোগানকে ধরেই আমাদের বেতনভুক্ত বুদ্ধিজীবীরা ছাত্রদের ন্যায্য আন্দোলনকে একটা বিতর্কিত বিষয় করে তুলতে চাইলো। ছাত্ররা কেন নিজেদের রাজাকার বললো সেই দিকে একটু নজর দেওয়া যাক।

Advertisement

দেশ গত পনেরটা বছর একটা দল নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শাসন করে যাচ্ছে। কাগজে কলমে একটা বিরোধী দল অবশ্য আছে। তাদের অবস্থা ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার’র মতো। একটা বিরোধী দল রাখতে হয় তাই রাখা। যারা চলে সরকারি দলের ছত্রছায়ায় এবং অনুগ্রহে। এতে করে দেশের মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আসলে কোনো বিতর্কের অবকাশ তৈরি হয়নি।

যেহেতু সরকারি দল একটা লোক দেখানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে তাই তারা জনমতকে পাত্তাও অবশ্য দেয় না। তারাই দেশের সবচেয়ে ভালোটা বোঝে এবং তারাই শুধুমাত্র দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা ভাবে। সরকার প্রধান এবং তার সাগরেদদের কথাবার্তায় সেটা খুবই স্পষ্ট।

তারা অবশ্য দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে যেটা খালি চোখেই দৃশ্যমান। ঢাকা শহর ঢেকে দেওয়া হয়েছে বিশাল বিশাল সব কংক্রিটের ছাদে। সেগুলোর অবশ্য গালভরা নামও আছে- ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ইত্যাদি। এতে করে একটা সবুজবিহীন শহরের জীবনমানের কতটা উন্নয়ন হয়েছে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।

দেশের সরকার এবং আমলারা যখন যেটা ভালো বুঝেছে সেটা করে ফেলেছে। দরকার হলে পরবর্তীতে নতুন বাজেট করে সেটা সরানো হবে। দেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রশস্ত নদী পদ্মাকে শাসন করা গেছে। যার ফলে দক্ষিণবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির সাথে রাজধানীর যোগাযোগ সহজ হয়েছে।

এসব উন্নয়ন দেশের মানুষের জীবনমান পরিবর্তনে কতটা প্রভাব ফেলেছে সেটা নিয়ে গবেষণা হতেই পারে। কিন্তু এসব উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি। সরকার, সরকারি দল, তাদের পোষ্য ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

তারা সবাই দুর্নীতি করে দেশে অঢেল ধনসম্পদের মালিক হবার পাশাপাশি দেশের টাকা বিদেশে পাচার করার এক মহোৎসবে মেতে উঠেছে। অথচ এই টাকা তাদের নিজেদের কোনো টাকা না। এটা দেশের আপামর সকল জনসাধারণের টাকা। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে সরকার এবং তার কর্মকর্তাদের অবহেলায় সেটা চুরি হয়ে গেছে।

এখন পর্যন্ত পরিষ্কার না যে আসলে কত টাকা চুরি গেছে। সেটা নিয়ে লোক দেখানো তদন্ত হয়েছে কিন্তু কাউকেই এর দায় স্বীকার করতে দেখা যায়নি। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে সরকারি দল ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগান নিয়ে দেশ শাসন করছে তাদের সময়েই এই ডিজিটাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরচেয়ে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার আর কি হতে পারে।

দেশের জীবনমান উন্নয়নের অনেক তথ্য আমাদের সামনে এসেছে। সেগুলো দেখে মনে হয়েছে আসলেই আমাদের অভাগা দেশটা যেন এতদিনে সত্যিকারের সোনার বাংলা হয়ে গেছে। কিন্তু শুভংকরের ফাঁকি’র মতো আমরা জানতে পারলাম এইসব তথ্যের বেশিরভাগই ভিত্তিহীন এবং মনগড়া। এটা যে কি ভয়ংকর একটা ব্যাপার সেটা যে কেউই বুঝবে।

এসব বিষয় নিয়ে যখনই কেউ কিছু বলতে গেছে তাকে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলের ক্ষমতার বিরুদ্ধে মুখ খোলা মানেই রাজাকার হয়ে যাওয়া। কি ভয়াবহ একটা ব্যাপার। ক্ষমতাসীন দল এবং তার আজ্ঞাবাহী সরকারি কর্মকর্তারা যত বড়ই পুকুরচুরি করুক তাদের কিছুই বলা যাবে না।

তাহলে হীরক রাজার দেশের মতো যন্তরমন্তর ঘরে পাঠিয়ে মগজ ধোলাই করে তাকে রাজাকার বানিয়ে দেওয়া হবে। তাই শিক্ষার্থীরা যে নিজেদের রাজাকার ঘোষণা করেছে এতে আমি বিশেষ অবাক হইনি। দীর্ঘদিনের অন্যায় অত্যাচারের ফলাফল নিজেকে রাজাকার উপাধি দিতে বাধ্য করেছে। কারণ সরকারি দলের আচার আচরণ এমন যে দেখে মনেহয় দেশে দুই রকমের মানুষ আছে- সরকারি দল আর রাজাকার। সেই হিসাবে সরকারি দল এবং তাদের মোসাহেবরা ছাড়া সবাই যেন রাজাকার।

আরও পড়ুনআমিরাতে ৫৭ বাংলাদেশির সাজা, মুক্তির উপায় কী?কোটাবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় মামলা ৭৯৮, গ্রেফতার ১০৩৭২প্রক্রিয়া চলছে, যে কোনো সময় জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের ঘোষণা

যাইহোক এরপর আসলো সেই ভয়াল সময়। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাত্রে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তার আগে তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়েছিল যাতে করে কেউ তাদের সেই বর্বর হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হতে না পারে। এবারও দেখা গেলো সরকার দেশের ইন্টারনেট বন্ধ করে প্রথমে দেশটাকে সারাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো।

এরপর চলল তাণ্ডব। যার খণ্ড খণ্ড চিত্র আমরা সবাই দেখছি। এতেই বোঝা যায় সামগ্রিক অবস্থা আরও কতটা ভয়াবহ ছিল। সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর অপারেশন থেকে কেউই রেহাই পায়নি ঠিক যেমন রেহাই পাইনি একাত্তরে। একেবারে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ তাদের আক্রোশের স্বীকার হয়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষই তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।

কত মানুষ যে মারা গেছে তার সঠিক সংখ্যাটা এখনও সামনে আসেনি। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের যে সংখ্যাটা প্রকাশ করা হয়েছে সেটাও উদ্বেগজনক। মানুষ মারা যায় নাই কোথায়? মানুষ নিজের ঘরে থেকেও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। নিষ্পাপ শিশুরা ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে লাশ হয়ে গেছে। জানালায় দাঁড়িয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত মানুষ হাসপাতালে যেতে পারেনি। যারা যেতে পেরেছে তাদেরও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

রাজপথের পাশাপাশি হাসপাতালের করিডোর তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এই মৃত্যুকে জায়েজ করার জন্য সরকারি স্থাপনায় হামলা করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে সেটার দায় চাপানো হয়েছে কাল্পনিক বিরোধী দলের ওপর। দীর্ঘ পনের বছর দেশ শাসন করার পর আসলে দেশে কোনো ভিন্নমত থাকে না। সেখানে রাতারাতি বিরোধী দল তৈরি হয়েছে এবং তাদের এতই সাহস যে তারা সরকারি স্থাপনা ধ্বংসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছে। হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরস্ত্র ছাত্রদের প্রতিহত করলেও যারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের কিছুই বলেনি।

দেশকে সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে এভাবেই অসংলগ্ন কথাবার্তায় সরকার নিজেই নিজের অবস্থান লেজেগোবরে করে ফেলেছে। তারা বলেছিল ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। এরপর যখন মোবাইল কোম্পানিগুলো জানালো তাদের আসলে নেটওয়ার্কে কোনো ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়নি। তখন আবার সরকার স্বীকার করলো তারা ইচ্ছে করেই নেটওয়ার্ক বন্ধ করে রেখেছিল। এই যুগে ইন্টারনেট বন্ধ করা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

কারণ এখনকার দুনিয়ায় সবকিছুই ইন্টারনেটভিত্তিক। এই সময়ে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছে। তারা দেশে তাদের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে উদ্বেগে দিন কাটিয়েছে। পাশাপাশি দেশও হারিয়েছে বিশাল অংকের রেমিট্যান্স। এরপর সরকার অবশ্য মায়াকান্না করে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রাখতে বলেছে। কতবড় পরিহাসের বিষয় এটা। অবশ্য প্রবাসীরা রেমিট্যান্স না পাঠালে তারা বিদেশে পাচার করবে কীভাবে?

একাত্তরের মতো এখনও প্রবাসীরা বিদেশের মাটিতে তাদের জোরালো প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। সারাবিশ্বেই তারা মানববন্ধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। সবচেয়ে আশার বিষয় হচ্ছে প্রবাসী দ্বিতীয় প্রজন্ম পর্যন্ত এই আন্দোলনে শরীক হয়েছে। এরা দেশের আন্দোলনকারী ছাত্রদের প্রায় সমবয়সী ফলে তারা দেশের ছাত্রদের জন্য সবচেয়ে বেশি অনুভব করছে।

তারা দেশের ছাত্রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাস্তবে এবং অনলাইনে সরব প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে। এরা সবাই আধুনিক প্রজন্ম। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে চৌকশ। তারা দেশের মান্ধাতার আমলের রাজনীতিবিদদের চেয়ে ভাবনায় এবং কাজে অনেক বেশি এগিয়ে। দেশের সরকার একাত্তরের কায়দায় যে ধ্বংসজ্ঞ চালাচ্ছে তার প্রতিবাদ তারা করছে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি দিয়ে। তাই তাদের ঠেকিয়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সরকার যখন ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে তখন তারা ভিপিএন দিয়ে বিশ্বকে সব জানিয়ে দিচ্ছে। এভাবেই চলছে লড়াই।

এখন সারা বিশ্বই জেনে গেছে বাংলাদেশে একটা গণহত্যা হয়েছে। ছাত্ররা তো ছিল নিরস্ত্র। তাদের আন্দোলন ছিল ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দলোন। অবশেষে যখন সরকারি ছাত্র সংগঠন এবং পুলিশ বর্বরভাবে তাদের ওপর হামলা করেছে তারা বুলেটের সামনে নিজের বুক পেতে দিয়ে প্রতিরোধ করেছে। এরপর সরকার রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য কান্না করেছে। সত্যি সেলুকাস! কি বিচিত্র এই দেশ! প্রাণের জন্য এখানে শোক করা হয় না।

শোক প্রকাশ করা হয় উন্নয়ন ধ্বংসের জন্য। যেসব ছাত্র মারা গেছে তারা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই তারা এর চেয়ে অনেক বেশি টেকসই উন্নয়নের পরিকল্পনা করতে পারতো। অবশেষে সরকার প্রধান আহতদের দেখতে গিয়ে কুমিরের মায়ের পুত্রশোক প্রকাশ করেছেন।

আশার কথা হচ্ছে এতো নিপীড়ন, নিষ্পেষণ সহ্য করেও ছাত্ররা এখনও রাজপথ ছাড়েনি। তারা যেই দাবি নিয়ে পথে নেমেছিল সেটা এখন গণঅভ্যুত্থানের রূপ নিয়েছে। এখন তারা ভাইয়ের, বোনের রক্তের হিসাব চায়। তাদের দাবি সরকার এই দায় নিয়ে পদত্যাগ করবে। কিন্তু আমাদের সরকারের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। তারা একইভাবে দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছুরই শেষ আছে। আমি নিশ্চিৎ একসময় এই সরকারেরও সময় শেষ হয়ে আসবে।

বলায় বাহুল্য সেটা স্বভাবিক পথে আসবে না। আর পরবর্তীতে যারা সরকারে আসবে তাদের মাথায়ও এই আন্দোলনের স্মৃতি নিশ্চয়ই থাকবে। তারাও দেশের মানুষের সাথে যথেচ্ছা ব্যবহার করার আগে তিনবার ভাববে। আমার কাছে ছাত্রদের এই আন্দোলনের এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো দিক।

বাংলাদেশ নামের ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্রদের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস আসলে যুগে যুগে এখানকার ছাত্রদের আন্দোলনের ইতিহাস। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সবখানেই ছিল ছাত্রদের সরব উপস্থিতি।

রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ তো ঘোষণা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন কিন্তু সেই দায়িত্ব পালন করে ছাত্ররা। স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত যত আন্দোলন হয়েছে সেখানেও ছিল ছাত্রদের সরব উপস্থিতি। ছাত্ররাই বারবার দেশের বিবেকের দায়িত্ব পালন করেছে। তারাই দেশের জন্য কোনটা ভালো সেটা ঠিক করে দিয়েছে। এবারও তারা দেশের ভবিষ্যৎ ঠিক পথে পরিচালিত করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। আমি নিশ্চিৎভাবেই জানি একদিন তারা সফল হবেই।

লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একদিন দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ছাত্ররা এইবার বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সত্যিকারের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবে যেখানে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। নিজের অধিকার চাইতে গেলে কেউ তাকে আর রাজাকার বলে গালি দিতে আসবে না। তার উপর সাঁজোয়া যান চালিয়ে তার কণ্ঠরোধ করবে না। যেই সরকার পরিচালনা করুক সে ছাত্রদের কথা সবসময় মনে রাখবে। কারণ কোনো অন্যায় করতে গেলে তারা আবারও ফুঁসে উঠবে। এভাবেই একটা সময় আমাদের দেশটা সত্যিকারের সোনার বাংলা হয়ে উঠবে।

এমআরএম/জেআইএম