বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ধ্বংস করতেই সরকারবিরোধী দলগুলোর ওপর সহিংসতার দোষ চাপাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের পরে এ দেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে সব রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের সন্তানদের, আমাদের শিশুসন্তানদের বাড়িতে গুলি করে এভাবে হত্যা করার কোনো নজির আমরা দেখিনি।’
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে গণতন্ত্র মঞ্চের এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব কথা বলেন মঞ্চের সমন্বয়ক।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সারাদেশ আজ এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। শতশত শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে… সরকার এত লাশের মিছিল, এত লাশ তারা তৈরি করেছে তাকে ঢাকতে পারছে না। তাকে ঢাকার জন্য আজ আমরা দেখছি তারা নানান রকম রাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করছে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘একদিকে সরকার বলছে, এ কাজ জামায়াত-শিবির করেছে, তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যদিকে আমরা দেখি তারা (সরকার) যে হাজার হাজার শিক্ষার্থী গ্রেফতার করছে তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। রাজনৈতিক পরিচয়হীন শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ফলে সরকারের প্রতারণা আজ পরিষ্কার। তারা সব আন্দোলন ধ্বংস করতে চায়, সব আন্দোলন ধ্বংস করার জন্য আজ সহিংসতার দায় চাপিয়ে যেভাবে অতীতে করেছে সেভাবেই তারা আজ আন্দোলন ধ্বংস করতে চায়।’
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টায় পুরানা পল্টনে মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কর্মসূচি ছিল গণতন্ত্র মঞ্চের। তার আগেই সকাল ১০টা থেকে সেখানে ব্যাপক পুলিশ, প্রিজন ভ্যানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। এ অবস্থায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা তাৎক্ষণিক বিজয়নগরে আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে ফুটপাতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
আরও পড়ুন
মতবিনিময় সভা ডেকে সংবাদ সম্মেলন, তোপের মুখে কাদের প্রতিটি হত্যার বিচার চায় দেশবাসী: জিএম কাদেরসমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আজ আমাদের শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে, হত্যার বিচার দাবি করে আমরা সমাবেশ করার কথা বলেছিলাম। আজ পুলিশ কোনো রকম আইন-কানুনের ধার না ধেরে তারা যেভাবে পুরানা পল্টনে এলাকা কর্ডন করে রেখেছে, আগ্রাসী ভূমিকার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাবেশ পণ্ড করার চেষ্টা করছে, আমাদের মাইক কেড়ে নিয়েছে, আমরা পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই, প্রতিবাদ জানাই।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘সরকার একটা শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনকে নিজেদের জেদ, অসহিষ্ণুতা, নিজেদের ভেতরকার যে স্বৈরাচারী চরিত্র সেসব কিছুর একটা উদগ্র আক্রোশ তারা করতে গিয়ে আজ সব আন্দোলনকে একদিকে অপমানিত করেছে, তারপর তাকে ভয়ংকর রকমভাবে দমনের চেষ্টা করেছে। যা একাত্তর (১৯৭১) সালের পরে এ দেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে সব রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের সন্তানদের, আমাদের শিশু সন্তানদের বাড়িতে গুলি করে এভাবে হত্যা করার কোনো নজির আমরা দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘শত শত শিক্ষার্থী হত্যা করা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই, এসব হত্যার বিচার চাই। সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে হবে।’
সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সহিংসতা হয়েছে অনেকগুলো স্থাপনায়… এটা কারা করেছে? আমরা স্বাধীন-নিরপেক্ষ বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চাই। কিন্তু তার আগেই কারা এসব কাজ করেছে তার দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। সব দোষ তারা আন্দোলকারীদের ওপর দিয়েছে, বিরোধীদলের ওপর দিয়েছে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার গণতন্ত্র মঞ্চ সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলেও জানান জোনায়েদ সাকি।
সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এখন সরকার শুধুমাত্র টিকে আছে প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। সরকারের ভাগ্য এখন চিকন সুতার ওপরে ঝুলছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমাদের পেশাদার বাহিনী তারা যদি কেবলমাত্র পেশাদারি দায়িত্ব পালন করে এই সরকারের পালিয়ে যাবার আর কোনো পথ পাবে না।’
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়া প্রমুখ। এতে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকবর খান উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/কেএসআর/এমএস