আইন-আদালত

কার গুলিতে শিশু নিহত জানতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বাড়িতে বা তার আশেপাশে গুলিতে শিশু নিহত হওয়ার কারণ কি তা জানতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতেও রিটে আর্জি জানানো হয়েছে।

Advertisement

আন্দোলন চলাকালে বাড়িতে এবং বাড়ির আশেপাশে নিহত শিশুদের নাম যুক্ত করা হয়েছে এই রিটে। তারা হলেন- আব্দুল আহাদ (৪), রিয়া গোপ (৬), সাফকাত সামির (১১) ও নাইমা আক্তার সুলতানার (১৫) ইফাত (১৬), আহমিদ (১৪), মোবাররকসহ (১৩)।

দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘জানালার পাশে এসে দাঁড়াতেই গুলি এসে কেড়ে নিল শিশুটিকে’, ‘বাসার ছাদে বাবার কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি’, ‘বারান্দায় দাঁড়ানো আহাদের ডান চোখে লাগে গুলি’ এবং দৈনিক সমকালে প্রকাশিত ‘ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরলো ওরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়। আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বুধবার (৩১ জুলাই) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন।

আরও পড়ুন ‘দুষ্কৃতকারীর গুলিতে’ পড়ার টেবিলেই লুটিয়ে পড়ে ছোট্ট সামির  যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক, আমরা লজ্জিত: হাইকোর্ট 

রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাবের মহাপরিচালককে (ডিজি) বিাবদী করা হয়েছে।

Advertisement

আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের কনভেশন ও সংবিধান অনুযায়ী শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। সেখানে কোনো শিশুকে বিনা কারণে হত্যা করা হয়েছে কি-না সেটা নিয়ে জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে রিটটি করেছি।

তিনি বলেন, রিটে শিশুদের প্রত্যেক পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে আর্জি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে এসব ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাওয়া হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই বিকেলে আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার একটি বাড়িতে গুলি লাগে শিশু আহাদের (৪)। আহাদ তাদের বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। গুলিটা তার ডান চোখে বিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরেই আটকে যায়। আহাদের বাবা আবুল হাসান আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী। তার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।

একই দিন নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় বাসার ছাদে খেলার সময় মাথায় গুলি লাগে রিয়া গোপের (৬)। বাসার সামনে হইহল্লা শুনে বাবা ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি ঢলে পড়ে বাবার কোলে।

Advertisement

আরও পড়ুন শিক্ষক-আইনজীবী-সংস্কৃতিকর্মী ও অভিভাবকদের গণতদন্ত কমিশন  শিশু ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়া ভুল হয়েছে: হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষ 

এদিকে মিরপুর ১৪ নম্বরের হাউজিং স্টাফ কোয়ার্টারে সাফকাত সামির (১১) ও তার চাচা মশিউর রহমান (১৬) বাসার বেডরুমে জানালার পাশে টেবিলে বসে পড়াশোনা করছিল। এসময় দুষ্কৃতকারীর একটি গুলি মশিউরের ডান কাঁধ ভেদ করে সামিরের ডান চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। সামিরকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন।

আর রাজধানীর উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন চারতলার বারান্দায় গুলিতে নিহত নাইমা আক্তার সুলতানা।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯ জুলাই উত্তরায় ৫ নম্বর সড়কে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। সেখানে পুলিশ-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। ওই সড়কের পাশেই একটি ভবনের চারতলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা আক্তার সুলতানা। বারান্দায় শুকানো কাপড় আনতে গিয়ে মাথায় গুলি লাগে তার। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে সে। পরে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ২০ জুলাই নাইমাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

এফএইচ/এসএইচএস/জিকেএস