বিশ্বজুড়ে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্টারলিংক। এটি মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের একটি অঙ্গসংস্থা, যা হাজার হাজার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দিয়ে চলেছে। বিশ্বের যেসব অঞ্চলে অপটিক্যাল ফাইবার পৌঁছানো দুঃসাধ্য, সেখানে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারে স্যাটেলাইটের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ। আর এর সাহায্যে দুর্গম এলাকাগুলোতেও সহজে পৌঁছানো যায় ইন্টারনেট সেবা।
Advertisement
স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে আপনার একটি স্টারলিংক কিট থাকতে হবে। এই কিটের মধ্যে স্টারলিংকের একটি ডিশ, একটি ওয়াইফাই রাউটার/পাওয়ার সাপ্লাই, তার এবং একটি বেজ থাকে। ডিশটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নড়াচড়া করে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। এর ফলে দুর্গম মরুভূমি, পাহাড় কিংবা সমুদ্রের মধ্যে, যেখানে সরাসরি তার বা ভূস্থাপনার মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যায় না, সেখানেও কাজ করতে পারে স্টারলিংক ইন্টারনেট।
স্টারলিংক ব্যবহারে খরচ কেমন?যুক্তরাষ্ট্রে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সংযোগ নিতে হার্ডওয়্যার ফি হিসেবে এককালীন ৫৯৯ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৭০ হাজার টাকার মতো।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
প্রতি মাসে একটি স্থায়ী ঠিকানার জন্য স্টারলিংক ব্যবহারে ফি গুণতে হয় ১২০ ডলার করে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার টাকা।
এর সঙ্গে বাড়তি ২৫ ডলার (২ হাজার ৯০০ টাকা) যোগ করলে গ্রাহকরা টার্মিনালটি নিয়ে ঘোরাঘুরিও করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ওই এলাকার স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের চেয়ে চলমান টার্মিনাল ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেটের গতি কিছুটা কম থাকতে পারে।
একটি ঘরের ওপর স্টারলিংকের ডিশ। ছবি: সংগৃহীত
স্থায়ী ব্যবহারকারীদের জন্য স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের গতি ৫০ থেকে ১৫০ এমবিপিএস (মেগাবিটস প্রতি সেকেন্ড) থাকতে পারে এবং ল্যাটেন্সি হতে পারে ২০ থেকে ৪০ মিলিসেকেন্ড (এমএস)।
Advertisement
জরিপ বলছে, ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে গড় ডাউনলোড গতি ছিল ৯০ দশমিক ৫৫ এমবিপিএস। কিন্তু ওই বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তা ৬২ দশমিক ৫ এমবিপিএসে নেমে এসেছিল।
আরও পড়ুন>>
কেন ভিপিএনে ঝুঁকছে মানুষ? ভিপিএন ব্যবহার বেশি হয় কোন ডিভাইসে?স্টারলিংকের অবশ্য একটি উচ্চগতির সংস্করণও (স্টারলিংক বিজনেস) রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ৫০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতি পাওয়া যাবে বলে প্রচার করা হয়। তবে সেজন্য ২ হাজার ৫০০ ডলারের (২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা প্রায়) টার্মিনাল এবং প্রতি মাসে ৫০০ ডলার (৫৮ হাজার টাকা প্রায়) সার্ভিস ফি গুণতে হবে।
সংস্থাটির আরেকটি সেবা রয়েছে, যার নাম স্টারলিংক মেরিটাইম। ২০২২ সালের জুলাইয়ে চালু হওয়া এই ব্যবস্থায় গভীর সমুদ্রেও ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়। এতে ইন্টারনেটের গতি থাকে ৩৫০ এমবিপিএস পর্যন্ত। তবে এই সেবা পেতে হলে ১০ হাজার ডলারের (১১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা প্রায়) বিশেষায়িত টার্মিনাল কিনতে হবে এবং প্রতি মাসে সার্ভিস ফি দিতে হবে পাঁচ হাজার ডলার (৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা প্রায়) করে।
গাড়ি, প্লেন এবং জাহাজেও ব্যবহার করা যায় স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট। ছবি: সংগৃহীত
স্টারলিংক কতটা জনপ্রিয়?স্পেসএক্সের তথ্যমতে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে স্টারলিংকের গ্রাহক ছিল ২ লাখ ৫০ হাজারের মতো। দু’মাস পরেই, অর্থাৎ মে মাসে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় চার লাখের বেশি।
আরও পড়ুন>>
বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধের দিনগুলোতে বিশ্বজুড়ে কী কী ঘটলো? বিশ্বজুড়ে ভিপিএন ব্যবহার করছে ১৬০ কোটি মানুষওই বছরের ডিসেম্বরে ১০ লাখ গ্রাহকের মাইলফলক অতিক্রমের ঘোষণা দেয় স্পেসএক্স। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সেই সংখ্যা বেড়ে ২০ লাখ এবং ২০২৪ সালের মে মাসে সেটি ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে।
অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে সর্বাধিক ডাউনলোড হওয়া ১০০ অ্যাপের তালিকায় রয়েছে স্টারলিংক। এটি তাদের স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান চাহিদার দিকেই ইঙ্গিত করে।
বছর দুয়েক ধরে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে স্টারলিংক। তবে সেটি এখনো সম্ভব হয়নি। স্টারলিংকের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে স্টারলিংক ইন্টারনেট চালু হতে পারে বাংলাদেশে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকেএএ/