দেশজুড়ে

আজও কান্না থামেনি ঈমনের মায়ের, চাকরি চান শামিমের স্ত্রী

সন্তানহারা মায়ের কান্না আজও থামেনি। সন্তানের এভাবে মৃত্যু এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে নিহত মো. ঈমনের (২২) মা কুলসুম বেগমের। ঢাকায় কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় গোলাগুলিতে নিহত রিকশাচালক মো. ঈমনের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার আলী নগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাজিবাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম।

Advertisement

ঈমনের মা কুলসুম বেগম জানান, তার এক মেয়ে ও তিন ছেলে। ভাইদের মধ্যে ঈমনই সবার ছোট। তার বড় দুই ভাই বিয়ের পর আলাদা হয়ে যায়। ঈমন তার বাবা-মার সঙ্গে থাকতেন। তারা দীর্ঘদিন ঢাকার বাড্ডার জালতলা এলাকায় বসবাস করেন। ঈমন ও তার বাবা রিকশা চালিয়ে সংসার চালান। গত ২০ জুলাই বিকেলের দিকে বাড্ডা এলাকায় যাত্রী নামিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ঈমন। ওই সময় সহিংসতার ঘটনায় গোলাগুলি হলে একটি গুলি ঈমনের মুখে লেখে মাথা ছিদ্র করে বের হয়ে যায়। পরে রাস্তা থেকে স্থানীয়রা ঈমনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পরের দিনে ২১ জুলাই ছেলেকে গ্রামের বাড়ি ভোলার আলী নগরে নিয়ে এসে পারিবারিক করবস্থানে দাফন করা হয়। তবে ঈমনের মৃত্যুর জন্য তার মা কাউকে দোষ না দিয়ে নিজেদের ভাগ্যকেই দোষারোপ করছেন বারবার।

তিনি জানান, ঈমন যেদিন নিহত হন সেদিন দুপুরেও ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। বাড্ডা এলাকার পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় বিকেলের মধ্যে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু বিকেলের দিকে কোনো এক ব্যক্তি ছেলের মৃত্যুখবর দেন। দ্রুত ছুটে গিয়ে ছেলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখতে পান তিনি।

Advertisement

এদিকে একইদিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে গোলাগুলিতে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ভোলার সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের পরানগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বিশ্বরোড এলাকার হাওলাদার বাড়ির মো. শামিম হাওলাদার। তিনি মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি ঢাকায় ইলেকট্রিক কাজ করতেন। তার বাবা প্রায় ১০ বছর আগে বাড়ির সামনে মোটারসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হন। তারা দুই ভাই ও এক বোন।

নিহত শামিমের স্ত্রী ও দুই সন্তান

শামিম হাওলাদারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম আসমা জানান, তার বিয়ের প্রায় ১০ বছর হয়েছে। এর আগ থেকেই শামিম হাওলাদার ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় বিভিন্ন বাড়ি, অফিস ও নতুন ভবনে ইলেকট্রিকের কাজ করতেন। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে সালমান এবার তৃতীয় শ্রেণিতে, মেজ ছেলে শিশু শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। আর ছোট ছেলের বয়স মাত্র ৩ বছর। তিনি তার শাশুড়ি ও দেবরের সঙ্গে সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকলেও শামিম জীবিকার তাগিদে ঢাকায় থাকতেন।

এবার কোরবানির ঈদে শামিম বাড়িতে এসেছিলেন। ১৯ জুলাই রাতেও শামিম তাকে ফোনে বলেন ঢাকায় অনেক গেঞ্জাম হচ্ছে। কথাটি শুনে স্বামীকে তিনি বাড়ি থেকে বের হতে বারন করেন। পরের দিন ২০ জুলাই দুপুরের দিকে শামিম হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে একটি গুলি তার বুকে লাগে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন তাকে গ্রামের বাড়ি পারিবারিক করবস্থানে দাফন করা হয়।

Advertisement

তিনি বলেন, বড় ছেলে বাবার কবর দেওয়ার দৃশ্য দেখে ঘরে এসে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। সে এখন বলে ‘মা আমার বাবাকে তো তোমরা কবর দিয়েছ, আমরা বাবা বলে ডাকবো কাকে। কে আমাদের আদর করবে, কোলে নেবে, ঘুরতে নিয়ে যাবে, খাবার কিনে দিবে।’ কিন্তু ছেলের কোনো কথার উত্তর আমার কাছে নেই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

স্বামীর মৃত্যুর পর তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেছে। তিনি যেহেতু এসএসসি পাস, তাই তার তিন সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চাকরি দাবি করেন তিনি।

ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান, ঢাকায় নিহতদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা তৈরি শেষে পরবর্তীতে নিহতের পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এফএ/জেআইএম