সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
Advertisement
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) মামলার এজাহারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নড়াইল জজ আদালতের বিচারকের কাছে হস্তান্তর করেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক মো. আল আমিন।
এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) যশোর বিশেষ জজ আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে নড়াইলের পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক মো. আল আমিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
Advertisement
মামলা বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান এবং অবৈধভাবে ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্থাৎ অবৈধ সম্পদ অর্জন করে নিজ ভোগ-দখলে রাখায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মেয়র আঞ্জুমান আরা।
আঞ্জুমান আরা ১৯৮৭ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি লাভ করে ধারাবাহিকভাবে ২০০০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং ডিসেম্বর ২০১৫ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। পরবর্তীতে আঞ্জুমান আরা ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি নড়াইল পৌরসভার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরার প্রতি সম্পদ বিবরণী নোটিশ ফরম জারি করে। সম্পদ বিবরণী ফরম পূরণ করে তিনি ওই বছরের ১৯ মার্চ দুদকে দাখিল করেন। দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে আঞ্জুমান আরা নিজ নামে ৪টি দলিলমূলে ক্রয় করা নড়াইল সদর উপজেলা এলাকায় মোট ১২৭.৫ শতক ডাঙ্গা/ধানী জমি, ১২০০ বর্গফুটের দ্বিতল বাড়িসহ মোট ৫৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ থাকার তথ্য এবং অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত ৭ লাখ ১৭ হাজার ৭১২ টাকা ও সঞ্চয়পত্র ২৩ লাখ টাকা এবং মোট ৩০ লাখ ১৭ হাজার ৭১২ টাকার অস্থাবরসহ সর্বমোট ৮৩ লাখ ৫৭ হাজার ২১২ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য ঘোষণা করেন। কিন্তু অভিযোগটি যাচাইকালে তার নামে ৫৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ৪১০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯১০ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য পায় দুদক।
বিবরণীতে দুদক আরও উল্লেখ করে, কমিশন থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আঞ্জুমান আরার নামে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির দিনই অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখে তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, নড়াইল শাখায় পরিচালিত তার নামীয় হিসাব থেকে একটি চেকের মাধ্যমে নিজে ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ উত্তোলন করেন এবং ২০২২-২০২৩ করবর্ষে দাখিল করা আয়কর রিটার্নে ব্যবসা বহির্ভূত অর্থ সম্পদ হিসেবে ৩৩ লাখ ১ হাজার ৬০১ টাকা দেখিয়ে জমা দেন। ওই টাকার মধ্যে তিনি ২০২৩-২০২৪ করবর্ষে দাখিল করা আয়কর রিটার্নে ব্যবসার পুঁজি ২৭ লাখ ৬২ হাজার ৫৯৭ টাকা দেখিয়ে দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেন। এছাড়া আঞ্জুমান আরা তার দুইটি ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ ২৬ হাজার ১০১ টাকা ও আসবাবপত্র-ইলেক্ট্রনিক্স বাবদ ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা সর্বমোট ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৮ টাকার তথ্য দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান করে দুনীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
Advertisement
আরও জানা যায়, অভিযুক্ত মেয়র আঞ্জুমান আরার নামীয় আয়কর নথি (২০২১-২০২৪ পর্যন্ত করবর্ষ) পর্যালোচনায় তার পৌর নির্বাচনী ব্যয়সহ পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের মূল্য ১ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯১০ টাকা। আয়কর নথি ও অন্যান্য রের্কডপত্র অনুযায়ী আঞ্জুমান আরার মোট গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ ১ কোটি ১৪ লাখ ৭ হাজার ৩৭৬ টাকা। সে হিসাবে অভিযুক্ত মেয়র আঞ্জুমান আরার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের (অবৈধ সম্পদ) পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩৪ টাকা।
এ বিষয়ে নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, তথ্য বিবরণীতে আমি সম্পদের কোনো তথ্যই গোপন করিনি। আর আমার অবৈধ অর্জিত কোনো সম্পদও নেই। তারপরও এমন মামলা কেন করছে আমার বোধগম্য নয়। নড়াইলের একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এটা তারই অংশ।
২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে একটি দল নড়াইল সদর পৌরসভায় বিভিন্ন খাত থেকে আদায় করা অর্থ ও এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন ফান্ড) মোট ৭৭টি চেকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৬৭৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথম অভিযান পরিচালনা করে।
হাফিজুল নিলু/এফএ/জেআইএম