বিনোদন

অনবদ্য এক জুটি হয়ে রইবেন আইয়ুব বাচ্চু-জুয়েল

নব্বই দশকের শুরুর দিকে ব্যান্ড সংগীতের বসন্তকাল এসেছিল এদেশে। তরুণ প্রজন্মের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে নানা ব্যান্ড। আজম খান, নকীব খান, তপন চৌধুরীদের হাত ধরে ছড়িয়ে পড়া ব্যান্ডের গান দিয়ে তারকা থেকে মহাতারকা হয়ে উঠছেন শাফিন আহমেদ, মাকসুদ, আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, হাসান, পার্থ বড়ুয়ারা।

Advertisement

সেই বসন্তে সুরের বাগিচায় নতুন ফুল হয়ে ফুটলেন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। বলা চলে, তাকে ফুল হিসেবে ফোটালেন এলআরবি ব্যান্ডের প্রাণপুরুষ কিংবদন্তি আইয়ূব বাচ্চু। অনেকেই মনে করেন, বাংলা আধুনিক সংগীতের ৯০ দশকের একটি সেরা ও অসাধারণ প্রাপ্তি জুয়েল। তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং তার অবস্থান তৈরিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য চিরকাল আইয়ুব বাচ্চুর কাছে ঋণী হয়ে থাকবে এদেশের সংগীতপ্রেমীরা।

১৯৯২ সালে প্রকাশিত জুয়েলের প্রথম অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’। সেই থেকে শুরু, তারপর একটানা ‘দেখা হবে না‘ পর্যন্ত আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন তার ছায়াসঙ্গী। নব্বই দশকে প্রকাশিত ‘কুয়াশা প্রহর’ থেকে ‘দেখা হবে না’ ৫টি অ্যালবাম যেন ৫টি বিরহগাঁথা। সবগুলো গানের সুর ও সংগীত পরিচালনায় ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। অ্যালবামের গানগুলো লুফে নিয়েছিলেন তখনকার শ্রোতারা। সেই সুবাদে বাচ্চু-জুয়েল হয়ে যান গানের সুপারহিট জুটি। আজও তাদের গানগুলো অনেক শ্রোতাদের প্রিয়।

২০১৭ সালে ইউটিউবে প্রকাশিত হয় হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের জনপ্রিয় গান ‌‘সেদিনের এক বিকেলে’র মিউজিক ভিডিও। গানটি আর্লি নাইন্টিজে সৈয়দ আওলাদের কথায়, আইয়ুব বাচ্চুর সুর এবং সংগীতে জুয়েলের দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘এক বিকেলে’র টাইটেল ট্রাক হিসেবে শ্রোতাপ্রিয় হয়েছিল। নতুন করে গানটির পিয়ানো ভার্সন রেকর্ড করেন জুয়েল। সেবার সংগীত আয়োজন করেছিলেন তরুণ সংগীত পরিচালক ইফতেখারুল আনাম। জুয়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ইফতেখার আলি ডনের উদ্যোগে ভিডিও সেক্টরের ৩০ জন মানুষ পারিশ্রমিক ছাড়াই জুয়েলের গানের ভিডিওটি নির্মাণে কাজ করেছিলেন।

Advertisement

গানটি প্রকাশের সময় জুয়েল শুনিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে তার সম্পর্কের গল্প। তিনি বলেছিলেন, ‘১৯৯৪ সালে আমার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘এক বিকেলে’ বের হয়। তার আগে ‘কুয়াশা প্রহর’ বের হয়েছিল। কিন্তু বাংলা গানের যুবরাজ আইয়ুব বাচ্চু তার অসাধারণ সুর আর সংগীতে এই গান তৈরি করে আমার মতো ক্ষুদ্র গায়ককে হঠাৎ করে ‘এক বিকেলের জুয়েল’ বানিয়ে দিলেন। ‘সেদিনের এক বিকেলে’ হয়ে গেল আমার সিগনেচার সং। তখন এত চ্যানেল, ইউটিউব, ফেসবুক ছিল না। সহজে নিউজ কাভারেজ পাওয়া যেত না। বিটিভিতে একটা গান প্রচার হওয়া আমার মতো নতুন গায়কের জন্য আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো ছিল। আমার হাতে সেই চাঁদ এনে দিয়েছিলেন বাচ্চু ভাই। তার স্নেহধন্য হওয়াটাই আমার ক্যারিয়ারের ম্যাজিক বলে মনে করি। বাচ্চু ভাইয়ের সুরে গানগুলো শ্রোতারা ক্রমে আপন করে নিলেন, সঙ্গে আমাকেও। অনেকে মনে করতেন, আমরা দুজন আপন ভাই। মফস্বল থেকে আসা এক স্বপ্নবাজ শিল্পীকে বাচ্চু ভাই তৈরি করেছিলেন বিশ্বাসের সঙ্গে, খুব মমতায়।’

আজ কয়েক বছর হলো আইয়ুব বাচ্চু নেই, জুয়েলও চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। রয়ে গেল এই জুটির অপূর্ব সব গান। যার মধ্যে ‘আবার নতুন করে’, ‘দৃষ্টিহীনের কাছে’, ‘মধ্যরাতের চিঠি’, ‘নতুন পুরনো’, ‘পাতা ঝরা সেই বিকেলে’, ‘কোথায় রাখো আমাকে’, ‘ছোট্ট একটা ঢেউ’, ‘দিন কেটে যায়’, ‘ফুলগুলো তোমারই থাক’, ‘কথা ছিল তুমি আসবে’, ‘তুমি গেছো চলে’, ‘সবুজ মৌনতা’, ‘নীরবে চেয়ে দেখেছি’, ‘দুটি মন দুটি প্রাণ’, ‘কেন জানি কোনো দিন আমাকে’, ‘এই গল্প তোমাকে’, ‘দেখা হবে না’ এবং ‘ফেরানো গেল না’।

এলএ/আরএমডি/জেআইএম

Advertisement